বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ষবরণ করেছে বগুড়াবাসী। নববর্ষ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। বাংলা বর্ষবরণের একটি অন্যতম আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রত্যেক বছর পয়লা বৈশাখের এই দিনটিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।
রবিবার সকাল ৮টার দিকে বগুড়া জেলা স্কুল মাঠ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে চলতে থাকে শোভাযাত্রা। বহন করা হয় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম। থাকে বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরণ, রংবেরংয়ের নানা প্রাণীর প্রতিকৃতি।
শোভাযাত্রায় বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ, বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম (বার), জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম, অতি. জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ, আলীমুন রাজীব, সদর ইউএনও আজিজুর রহমান, বিশিষ্ঠ আইনজীবী এ্যাড. রেজাউল করিম মন্টু সহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গানে গানে ফেলে আসা বছরের দুঃখ-গ্লানিকে বিদায় জানাতে প্রতি বছরের মতো এবারো বগুড়ায় আয়োজন করে দিন বদলের মঞ্চ। এরপর ৬ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন হয় শহরের পৌর এডওয়ার্ড পার্কে।
বগুড়া জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বগুড়া পৌরসভা, বৃহত্তর বগুড়া সমিতি ঢাকা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়া ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সহযোগিতায় এবং বগুড়া থিয়েটারের আয়োজনে শহীদ টিটু মিলনায়তন চত্বরে ৬দিনের বৈশাখী মেলার সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে মেসার্স শুকরা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান আকন্দ।
৬ দিন ব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ জননী আমেনা খাতুন। প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ। বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম বার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এ্যাড. আব্দুল মতিন ও এ্যাড. রেজাউল করিম মন্টু, বগুড়া প্রেসক্লাব সভাপতি মোজাম্মেল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, বগুড়া চেম্বার সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন, বৃহত্তর বগুড়া সমিতি ঢাকার সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম।
সভাপত্বি করেন বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ্যাড. একেএম মাহবুবর রহমান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না। এছাড়া বর্ণিল আয়োজনে ৭দিন ব্যাপী বাংলার মুখ বৈশাখী মেলা আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে উদ্বোধন হয়। পয়লা বৈশাখ সকাল সাড়ে ১০ টায় মেলার উদ্বোধন করেন বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম (বার)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন, চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন, ডালিয়া নাসরিন রিক্তা।
মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান রনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী, সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান, বাংলারমুখ জেলা কমিটির উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বাবু, হাসিবুল ইসলাম মুন, আব্দুল আউয়াল, মিজানুর রহমান মিন্টু, জহুরুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান রকি, ফরিদুল ইসলাম মুক্তা, মিম পোদ্দার, সজল শেখ।
বর্ষবরণ উপলক্ষে শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনের সামনে আভা হোমিও হেলথ্ সেন্টারের আয়োজনে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। বেলা ১১ টায় ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল মেশিনারীজ মার্চেন্ট এসোসিয়েশন বগুড়ার সভাপতি আলহাজ শেখ।
এসময় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড সদস্য ডা. এসএম মিল্লাত হোসেন, বগুড়া প্রেসক্লাবের নির্বাহি সদস্য আব্দুস সালাম বাবু, ডা. মাহফুজা উপস্থিত ছিলেন। উত্তরবঙ্গ অনলাইন রক্তদান সংগঠন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে। এদিকে উভয় মেলায় নাগরদোলা, লাঠি খেলা, সাপ খেলা, মোরগ লড়াই, লুডু খেলা, বৌচি, হা-ডু-ডু খেলা, মার্বেল, মৃতশিল্প, চুড়ি, ফিতাসহ নানা পসরা বসেছে। প্রতিদিন মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পিরা।
বগুড়া প্রেসক্লাব, সংশপ্তক থিয়েটার, পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন পয়লা বৈশাখে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম বার জানান, বগুড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা পয়লা বৈশাখে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। নিরাপত্তায় থাকছে স্পেশাল ব্রাঞ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কমিউনিটি সদস্য, ইউনিফর্ম পুলিশ সদস্য, সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য, ডিটেক্টিভ পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় জোরদার ভূমিকা পালন করবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন