কক্সবাজারের টেকনাফে আনন্দের মধ্যে দিয়ে সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে প্রতিমা বির্সজনকে ঘিরে সমুদ্র সৈকতে জনতার ঢল নামে। সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে সমুদ্র সৈকতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় এসব প্রতিমা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নেচে গেয়ে ট্রাকবাহী প্রতিমা নিয়ে আসে ভক্তরা।
ডেইল পাড়া দূর্গা মন্দির অনিল কুমাড় শীলের ভাষ্য মতে, মা দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে মর্ত্যলোকে বা বাপের বাড়ি এসেছেন এবং কৈলাসে বা শ্বশুর বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চেপে। এ কারণে সামনের দিনগুলোতে ঝড় ঝাপটার আশঙ্কা আছে।
৫ দিন ধরে নানান উৎসবমুখর পরিবেশে থাকা ভক্তদের মধ্যে অনেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে মা দুর্গাকে বিদায় দিয়েছেন। সুখ ও আনন্দ নিজে পুনরায় আগামী বছর ফিরে আসার মানসে।
টেকনাফ কেন্দ্রীয় বিষ্ণু মন্দির, ডেইল পাড়া দুর্গা মন্দির, হ্নীলা পুরান বাজার কালী মন্দির, নাটমুরা পাড়া হরি মন্দির, বাহারছড়া শামলাপুর বিষ্ণু মন্দিরের প্রতিমাগুলো সৈকতে বিসর্জন করা হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের টেকনাফ উপজেলা শাখার তত্ত্বাবধানে আয়োজকরা জানান, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়া পূজা উদযাপন করা হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সমুদ্রসৈকত এলাকায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
এর আগে সকালে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপে মণ্ডপে অঞ্জলি, পূজা আরতি এবং ঢাকের তালে মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে ভিড় করেন ভক্তরা। দুর্গাপূজায় সবশেষ রীতিটি হচ্ছে ‘দেবী বরণ’। এটি শুরু হয় বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মাধ্যমে। বিবাহিত নারীরা সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। তারা এই সিঁদুর মাখিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানান। সিঁদুরে মুখ রঙিন করে হাসি মুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই এই সিঁদুর খেলা। তাই মাকে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে অপরকে সিঁদুর লাগান, নাচ-গান করেন, যেন সারা বছর এমন আনন্দেই কাটে।
সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা রঞ্জিত বলেন, কোনও সমস্যা ছাড়াই সুন্দরভাবে মাকে বিদায় দিতে পেরে খুবই আনন্দ লাগছে।মায়ের কাছে প্রার্থনা তিনি যেন সবার মনের আশা পূরণ করে দেন। পৃথিবীর সব মানুষের ওপর খুশি হন। জগতের মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেন।
টেকনাফ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শিব পদ ভট্টচার্য্য বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় সুষ্ঠুভাবে মন্দিরসমূহে পূজা শেষে প্রতিমাসমূহ সমুদ্রসৈকতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্মের মানুষ ছাড়াও সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে বিদায় জানানো হয় দুর্গা প্রতিমাকে। দুর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ সকলকে সনাতন ধর্মাবলীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা