১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১৫:৪০

বেনাপোলে ধর্মঘটের হুমকির মুখে পৌর টোল আদায় বন্ধ করল প্রশাসন

বেনাপোল প্রতিনিধি

বেনাপোলে ধর্মঘটের হুমকির মুখে পৌর টোল আদায় বন্ধ করল প্রশাসন

বেনাপোল গেইট

ট্রাক মালিক সমিতি ও বন্দর ব্যবহারকারী ৭টি সংগঠনের ধর্মঘটের হুমকির মুখে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বেনাপোল পৌরসভার অবৈধ ও জোর করে আদায় করা যানবাহনের পৌর টোল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। 

গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে।

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করে কোনো টোল আদায় করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের সাফ জবাব এসব ট্রাক পৌরসভার কোনো সড়ক ব্যবহার করে না। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ব্যবহার করে তারা। সে ক্ষেত্রে পৌরসভা এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় করতে পারে না।

অপরদিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, টোল আদায় ইজারা নিয়ম মেনেই দেওয়া হয়েছে। বৈধ ইজারাদার টোল আদায় করছে। পুলিশ টোল আদায় বন্ধ করে দিয়েছে। পূর্ব ঘোষণা কিংবা নোটিশ ছাড়াই বৈধ ঠিকাদারকে টোল আদায়ে বাধা দেওয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

এ প্রসঙ্গে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান জানান, ডিসি ও এসপি স্যারের মৌখিক নির্দেশে বেনাপোল পৌর টোল আদায় বন্ধ করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০০৬ সালে বেনাপোল পৌরসভা গঠিত হয়। ২০০৭ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির আহমেদ পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকাকালীন বেনাপোল হাট বাজার, ট্রাক ও পরিবহন টোল ইজারা দেন। সেই থেকে ট্রাক ও বিভিন্ন যানবাহন থেকে পৌর টোল আদায় করা হয়। ২০১১ সালে প্রথম নির্বাচিত পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনও পূর্বের ধারাবাহিকতায় ট্রাক ও যানবাহনের টোল আদায় অব্যাহত রাখেন।

এদিকে, সরকার এক নির্দেশে যানজট সৃষ্টি করে মহাসড়কে কোনো টোল আদায় করা যাবে না বলে নির্দেশ দেন। এর পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দরে ‘স্থলবন্দর উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী সড়কের উপরে পৌর টোল আদায় বন্ধ করার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, যশোর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ১ অক্টোবর যশোর জেলার (ঝিকরগাছা, শার্শা ও বেনাপোল ট্রাক ট্যাংকলরী (দাহ্য পদার্থ বহনকারী ব্যতীত) ট্রাক্টর ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর টোল আদায় বন্ধে একটি স্মারক লিপি পেশ করেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, মন্ত্রীর আশ্বাসে ওই সভায় উপস্থিত ট্রাক মালিক নেতৃবৃন্দ খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনায় বেনাপোল পৌর কর্তৃক অবৈধ টোল আদায় বন্ধ করেনি। পরবর্তীতে ১৩ অক্টোবর বেনাপোল ট্রাক মালিক সমিতির কার্যালয়ে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে এক জরুরি সভা করে বুধবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় তারা। ধর্মঘটের পরিপেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্থানীয় প্রশাসন যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের বেনাপোল অংশে পৌর টোল আদায় বন্ধ করে দেয়।

অপরদিকে, বেনাপোল পৌরসভার সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়ম মেনেই ট্রাক টোল আদায়ের ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও পর্যাপ্ত রাজস্ব আয় না থাকায় হাটবাজার, ট্রাক, পরিবহন ও অন্যান্য খাতের ইজারা বাবদ আদায়কৃত অর্থ দিয়ে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতার সিংহভাগ পরিশোধ করা হয়। ২০১১ সালে প্রথম নির্বাচিত পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনও পূর্বের ধারাবাহিকতায় টেন্ডারের মাধ্যমে বেনাপোল হাট-বাজার, ট্রাক ও পরিবহন টোল ইজারা চালু রেখেছেন। পৌরসভার টেন্ডার অনুযায়ী ট্রাক টোল আদায়ে ইজারা পান সংশ্লিষ্ট ইজারাদার। 

উলে­খ্য, প্রতিদিন সাড়ে তিনশ থেকে চারশত বিভিন্ন যানবাহন বেনাপোলে প্রবেশ করে পণ্য ও যাত্রীবহনের জন্য। প্রতিটি যানবাহন থেকে ৮০ টাকা করে টোল আদায় করতো পৌরসভার ইজারাদার। প্রতি মাসে টোল আদায় হতো ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। 

 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর