খুনি খুন করে সাক্ষ্য বা প্রমাণ রেখে যায়- এমন কথা প্রচলিত আছে। এই কথার সত্যতা মিলল আরও একবার। এবার খুনির ফেলে যাওয়া গায়ের চাদর থেকেই উদঘাটন হল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নবম শ্রেণির স্কুল ছাত্র ইব্রাহিম হোসেন রকি হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
মঙ্গলবার সকালে শহরের ভানুগাছ সড়কের বধ্যভূমির পাশের চা বাগানের একটি গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায়. ইব্রাহীম হোসেন রকির লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
সুরতহাল প্রতিবেদন শেষ করে লাশ পাঠানো হয় ময়নাতদন্তে। এর পরপরই এই হত্যার ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামানের নেত্বেতে মাঠে নামে পুলিশ।
লাশের গলায় বাঁধা চাদরের সূত্র ধরে এগোতে থাকে পুলিশ। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে। অতঃপর রাতে আসে সফলতা। শহরের স্টেশন রোড থেকে গ্রেফতার করা হয় রকির এক বন্ধু সাব্বির মিয়াকে। আর খাসগাঁও এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় সাব্বিরের বন্ধু ফয়সাল মিয়াকে। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য।
সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান জানান, রকি ও সাব্বির একে অপরের বন্ধু। এক মাস আগে তাদের দুইজনের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে ঝামেলা বাঁধে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতিরও ঘটনা ঘটে। এর পর কেটে যায় এক মাস। কারও সাথে কারও কথাবার্তা, এমনকি কোনও যোগাযোগ পর্যন্ত ছিল না। তবে সাব্বির প্রতিশোধ নিতে মনে মনে সুযোগ খুঁজতে থাকে।
সাব্বির ১৩ জানুয়ারি রকিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাব্বির তার আরেক বন্ধু ফয়সালের সঙ্গে স্টেশন রোডে দেখা করে হত্যার ছক আঁকে। সেই মোতাবেক সাব্বির রকিকে ফোন করে জিজ্ঞাস করে যে সে কোথায় আছে। রকি জানায়, সে রেলগেইট এলাকায় আছে। পরে সাব্বির ও ফয়সাল শহরের ভানুগাছ রোডের রেলগেইট এলাকায় গিয়ে রকিকে একটি অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবার কথা বলে দক্ষিণ ভাড়াউড়া চা বাগানে নিয়ে গিয়ে খুন করে।
বুধবার মৌলভীবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৬ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে সাব্বির ও ফয়সাল এই হত্যার বিষয়ে জবানবন্দি দেয়।
তারা আদালতকে জানায়, ভাড়াউড়া চা বাগানে নিয়ে সাব্বির রকির মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে মাটিতে শুইয়ে দেয়, পরে ফয়সাল হাতে ধরে এবং সাব্বির রকির মুখে স্কচটেপ দিয়ে মুখে ও গলায় পেঁচিয়ে প্রায় ১০ মিনিট গলায় হাত দিয়ে চেপে ধরে বুকের উপরে বসে থাকে। তখন রকির পা চেপে ধরে রাখে ফয়সাল।
নিস্তেজ হওয়ার পর তারা দুইজন মিলে রকির জ্যাকেটে ধরে টেনে গাছের কাছে আনে এবং রকির পরনের প্যান্টের বেল্ট সাব্বিরের গায়ের কালো চাদর দুই ভাগ করে রকির গলায় সাথে পেঁচিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখে তারা দুজনে বাড়িতে চলে যায়।
সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে লাশ দেখেই বুঝে নিয়ে ছিলাম এটা পরিকল্পিত হত্যা। পরে লাশের সঙ্গে পাওয়া চাদর এবং তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে খুনি সনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম সই।
বিডি প্রতিদিন/কালাম