রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সংকট কোনোভাবেই যেন পিছু ছাড়ছে না। গ্যাসসংকট, যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানান জটিলতায় বিপর্যস্ত হয়ে বাৎসরিক ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতার এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এখন ৪ লাখ টনে নেমে এসেছে। ফলে দেশের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের কৃষি খাতে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
সিইউএফএলের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের সার উৎপাদন নিয়ে এক সময় সুখ্যাতি ছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠান বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সংকটে পড়েছে। ২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। টানা ১০ মাস বন্ধের পর একই বছরের ১৩ অক্টোবর ফের চালু হয়। কিন্তু চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।
এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি কারখানাটি ফের চালু করা হলেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় ১১ এপ্রিল আবারও বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি সরকার সার কারখানাগুলোতে টানা গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্তের পর ২ নভেম্বর কারখানাটি আবারও চালু করা হয়। কিন্তু চালুর ১২ ঘণ্টার মধ্যে কারখানাটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আবারও বন্ধ হয়ে যায়।
কারিগরি ত্রুটির কারণে সিইউএফএল বন্ধ, তবে শিগগিরই চালুর আশা করা হচ্ছে
মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, বিসিআইসির পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল)
সিইউএফএলের বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান মো. কামরুল ইসলাম খন্দকার বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানাটিতে কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এ কারণে চালুর পর বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ত্রুটি সারিয়ে অ্যামোনিয়া প্লান্টটি পরীক্ষামূলক আবারও চালু করা হয়েছে। প্লান্টটি চালু থাকলে পরবর্তী ধাপে সয়ংক্রিয়ভাবে ইউরিয়া প্লান্টও চালু করা যাবে। সিইউএফএলের যান্ত্রিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কারখানাটি সম্পূর্ণ গ্যাসনির্ভর। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। আবার প্রতিবার কারখানা চালু করতে অন্তত ১০-১২ দিন সময় লাগে। আবার বন্ধ করতে চাইলেও অন্তত ৭২ ঘণ্টা সময় দিতে হয়। কিন্তু সর্বশেষ ১১ এপ্রিল কারখানাটিতে ২৪ ঘণ্টার নোটিসে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কারণে কারখানার যন্ত্রাংশে ব্যবহৃত অনেক রাসায়নিক ঠিকমতো পরিষ্কার করা যায়নি। এ কারণে চালুর পর আবারও ত্রুটি দেখা দেয়। সিইউএফএলের তদারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্টিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কর্মকর্তারা বলছেন, গত দুই দশক ধরে এই কারখানায় ত্রুটিপূর্ণ রেক্টর দিয়ে উৎপাদন চলছে। বিভিন্ন সময়ে নতুন রেক্টর সংযোজন নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। আবার বারবার বন্ধ ও চালু করতে গিয়েও নতুন করে সংকট তৈরি হচ্ছে।
বিসিআইসির পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল) মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, দেশীয় সার কারখানাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়। আপাতত আগামী মে মাস পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে সিইউএফএল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে শিগগিরই এটি আবার চালুর আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নতুন রেক্টরসহ নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজনেরও পরিকল্পনা আছে।