রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগের ওয়াটার প্লান্টের সংযোগ লাইনের দুটি অত্যাধুনিক মেশিন নষ্ট হয়ে পড়েছে। এ কারণে ডায়ালাইসিস করাতে পারছেন না কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীরা। বুধবার সকাল থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়ালাইসিস ইউনিটি বন্ধ করে দিয়েছে।
হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওয়াটার প্লান্টের মূল সরবরাহ লাইনের দুটি মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সকালে হাসপাতালে মাইকিং করে সেটি রোগীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
রংপুরসহ বিভাগের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কিডনি রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এই অঞ্চলের গরিব রোগীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।
বুধবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ২৫ বেডের কিডনি বিভাগের সব বেড খালি অবস্থায় পরে আছে। আর বসে অলস সময় পার করছেন কয়েক নার্স আর ওয়ার্ড বয়। তারা জানান, ডায়ালাইসিসের জন্য পানি সরবরাহের প্রধান লাইনের দুটি মেশিন নষ্ট থাকার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকে বিষয়টি জানিয়েছি।
রংপুরে বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতালগুলো ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে চিকিৎসার ব্যয়ভার অত্যন্ত বেশি।
কিডনি বিভাগের ইনচার্জ মোখলেছুর রহমান জানান, রমেক হাসপাতালের নেফ্রোলজী (কিডনী) বিভাগে বেডের সংখ্যা ২৫টি। প্রতিটি বেডের জন্য একটি করে ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এরমধ্যে আবার ১৩টি অচল। রোগীদের চিকিৎসা-সেবা দেয়ার জন্য এতদিন কোনো রকমে ওয়ার্ডটি চালু রাখা হয়েছিল। মেশিন নষ্টের কারণে বুধবার থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ।
তিনি আরো জানান, যে প্রতিষ্ঠান মেশিনগুলো সরবরাহ করেছে হাসপাতাল পরিচালকের মাধ্যমে তাদের জানানো হয়েছে। আশা করি দুই-একদিনের মধ্যে তা চালু করা সম্ভব হবে।
কিডনি রোগে আক্রান্ত লালমনিহাট কালিগঞ্জের শেফালী বেগম জানান, ২০ হাজার টাকার প্যাকেজে সপ্তাহে রবিবার ও বুধাবার ডায়ালাইসিস করি। কিন্তু মেশিন নষ্ট থাকার কারণে বিনা চিকিৎসায় বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে করে শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ২০ হাজার টাকার প্যাকেজে ৪৮ বার ডায়ালাইসিস করতে হবে বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাট থেকে আসা অপর এক রোগী লিয়াকত হোসেন জানান, তিনিও ২০ হাজার টাকার প্যাকেজ নিয়েছেন কিন্তু প্রায় সময় হাসপাতালের ডায়ালাইসিস বিভাগ বন্ধ থাকায় চরম দুভোর্গে পড়েছি আমি। কোন কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছি না।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা সিরাজুল ইসলাম জানান, মেশিন নষ্ট থাকার কারণে রবিবার চার ঘণ্টার ডায়ালাইসিস মাত্র দুই ঘণ্টা করা হয়েছে। মেশিন কবে ঠিক হবে তা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না।
এ বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোস্তম আলী জানান, বিষয়টি আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকে জানিয়েছি। মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা আসলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার