৭ এপ্রিল, ২০২০ ২০:৩৪

শিল্পমন্ত্রীর হটলাইনে ক্ষুদেবার্তা দিলেই ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার

নরসিংদী প্রতিনিধি

শিল্পমন্ত্রীর হটলাইনে ক্ষুদেবার্তা দিলেই ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার

শিল্পমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অসহায় ও হতদরিদ্রদের খাদ্যসামগ্রী দেয়া হচ্ছে।

‘কিস্তিতে অটো কিনেছি আজ ৩ মাস, ১৫ দিন যাবৎ বসা, এক ছেলে বয়স দুই বছর, বর্তমানে বড় অভাবে আছি। না পারি কারো কাছে বলতে, না পারি কারও কাছে সাহায্য চাইতে।'

‘ভাই আমি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করি। আমি আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার বাড়িতে খাবার নাই, যদি গোপনভাবে সহযোগীতা করেন, তাহলে উপকৃত হবো।'

‘আমার বাড়িতে দুই দিন ধরে চাল নাই, ধার করে চলতেছি। এমন অবস্থা আপনার শরণাপন্ন হচ্ছি।’

এই ক্ষুদেবার্তাগুলো করোনাভাইরাসে কারণে নিদারুণ কষ্টে কাঁটানো নরসিংদীর মনোহরদীর কয়েকটি মধ্যবিত্ত পরিবারের। যে পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাঁটালেও লোক লজ্জার ভয়ে খাদ্য সামগ্রীর জন্য হাত বাড়াতে পারেনা। তাই গোপনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের হটলাইন নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছে সহযোগিতার জন্য।

ক্ষুদেবার্তা পাঠানো এমন শতাধিক পরিবারকে শিল্পমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের ঘরে ঘরে এসব খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়। এসময় খাবার হাতে পেয়ে কর্মহীন অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর সদস্যদের মুখে হাসি ফোঁটার পাশাপাশি তারা প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন।

ক্ষুদেবার্তা গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পেয়েছে উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের ফরাজী পাড়ার মধ্যবিত্ত ১৪টি পরিবার। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরদার সাখাওয়াত হোসেনের বকুলের নিজ গ্রাম এটি। করোনায় কষ্টে দিনাতিপাত করলেও কেউ খোঁজ নেয়নি। তাই ক্ষুদেবার্তা দিয়ে খাদ্য সহায়তা পাওয়ায় অভিভূত তারা।

সহায়তা পাওয়া একজন সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে ২ সপ্তাহ ধরে আমাদের কোন কাজ নাই। ঘরে খাবার নাই। কারো কাছে সাহায্য ও চাইতে পারি না। ফেসবুকে মন্ত্রী মহদোয়ের ছেলের পোস্ট দেখে সকালে আমরা হটলাইনে ম্যাসেজ পাঠাই। আর দুপুরেই আমাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। অভাবের সময়ে এই খাবার দেয়ায় আমরা কয়েকদিন ভালো ভাবে কাটাতে পারবো।

এর আগে মনোহরদী ও বেলাবো উপজেলায় ৬ হাজার গরিব ও দুস্থ পরিবাররের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় শিল্পমন্ত্রীর নিজ উদ্যোগে রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরীব ও দুস্থ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী।

বিতরণ করা খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি তেল, একটি সাবান ও একটি মাস্ক। এর আগে শিল্পমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৫ হাজার মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, খাদ্য সামগ্রী ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার থেকে ১০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়।

এছাড়া মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের খাদ্য সংকট দূর করতে চালু করেন হটলাইন নম্বর। কোন খাদ্যের প্রয়োজন হলে মোবাইল নম্বরে নাম, ঠিকানা ও পেশা লিখে ম্যাসেজ দিলেই ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়।

শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মঞ্জরুল মজিদ মাহমুদ সাদী বলেন, কর্মহীন, অসহায় ও হতদরিদ্রদের মাঝে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ চলমান আছে। জনসমাগম ও দোকানপাট লকডাউন থাকায় ব্যবসা বাণিজ্য অনেকটা স্থবির। তাই মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার অর্থ কষ্টে ভুগলেও পারিবারিক ও সামাজিক মান সম্মানের বিষয়টি চিন্তা করে সাহায্য নিতে চায় না। আমরা তাদের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। কোন কষ্টে থাকলে আমাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে নাম, ঠিকানা ও পেশা লিখে ম্যাসেজ দিলেই আমরা যোগাযোগ করে সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর