চাঁদপুরে পুলিশের মানবিক হস্তক্ষেপে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী গৃহবধূর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার ভোররাতে জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও গ্রামে ওই গৃহবধূকে তার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়। মৃতের জানাজায় হাজীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সাত পুলিশ সদস্যসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে মরদেহ দাফনে বাধা দানকারী ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল লাগোয়া করোনা রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে গৃহবধূ ফাতেমা বেগম মারা যান।
চাঁদপুরে করোনাবিষয়ক ফোকালপার্সন, জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সুজাউদৌলা রুবেল জানান, শুক্রবার রাত ৮টায় সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টতে আক্রান্ত হওয়া এক নারী রোগীকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন স্বজনরা। এর দেড় ঘণ্টার মধ্যে মারা যান ফাতেমা বেগম নামে ৪০ বছরের এই রোগী।
ডা. রুবেল আরও জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন মেনে মৃতের দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
তাছাড়া তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে করোনার কারণে মারা গেছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে আজ শনিবার সেই নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরও জানান, তার অধীনে এখনও ৮জন করোনা পজিটিভ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।
এদিকে, মৃতের মরদেহ দাফনে বাধা হয়ে দাঁড়ান তার এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৃহবধূর স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেন কর্মসূত্রে চাঁদপুর শহরে থাকলেও তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। তবে তার শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নে। কিন্তু তার স্ত্রী’র অনাকাঙ্ক্ষিত এমন মৃত্যুর ঘটনার পর শ্বশুরবাড়িতে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
এতে তাতে বাদ সাধেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী এবং স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইসমাইল হোসেন। তাদের এমন অমানবিক আচরণে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
এই পরিস্থিতিতে মৃত ফাতেমা বেগমের মরদেহ কোথায় দাফন হবে- তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
এসময় হাজীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রশিদ, মরদেহ দাফনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। তবে বিষয়টি জেনে এগিয়ে আসেন, হাজীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন উজ্জল।
গৃহবধূর মরদেহ সঙ্গে নিয়ে রাত আড়াইটায় সাতজন পুলিশ সদস্যসহ রাজারগাঁও-এ হাজির হন তিনি। মরদেহ দাফনের আগে জানাজার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ইমামতি করেন, স্থানীয় ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা জুবায়ের হোসেন। এতে অংশ নেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন পরিবারের সদস্যসহ আরও পাঁচজন। তাদের সঙ্গে ইউপি মেম্বার ইসমাইল হোসেনও ছিলেন। শুধু আসেননি চেয়ারম্যান আবদুল হাদী। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন মেনে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এই প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন উজ্জল বলেন, এমন মানবিক দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে যাবে-এটাই স্বাভাবিক। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যারা মরদেহ দাফনে বাধা দিয়েছেন তারা কোনও অবস্থায় সভ্য মানুষ হতে পারেন না।
বিডি প্রতিদিন/কালাম