আজ ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ পাক হানাদারমুক্ত দিবস। ৪৯ বছর আগে এই দিন একে একে পাক হানাদাররা মানিকগঞ্জ থেকে পালিয়ে যায়। বিভিন্ন থানা থেকে আগেই সরে এসে মহকুমা শহরে অবস্থান নেয় পাক হানাদাররা। মানিকগঞ্জ সিএন্ডবি’র ডাকবাংলো ছিল হানাদার বাহিনীর সদর দপ্তর। এখান থেকেই হানাদার এবং তাদের দোসররা নিধনযজ্ঞ পরিচালনা করত। আর মূল ব্যারাক ছিল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পিটিআইয়ের মূল ভবনে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে মানিকগঞ্জের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধের প্রস্তুতি শুর হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য মানিকগঞ্জে এডভোকেট খন্দকার মাজহারুল হক চান মিয়াকে চেয়ারম্যান করে মোঃ মোসলেম উদ্দিন খান হাবুমিয়া, ক্যাপ্টেন(অবঃ.) আবদুল হালিম চৌধুরী, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী, মীর আবুল খায়ের ঘটু, মফিজুল ইসলাম খান কামাল এই ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। বিপ্লবী কমান্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মানিকগঞ্জ ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়। ২৫ মার্চ মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে আরিচা ফেরিঘাট বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে, ১ এপ্রিল হেলিকপ্টার করে সৈন্য এনে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের দখল নেয় পাক হানাদারা। ঐ দিনের মধ্যেই মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন থানা পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়। জুলাই মাসে রাজাকার, আল-বদর ও শান্তি কমিটি গঠিত হয়। স্বাধীনতা বিরোধীরা পাকবাহিনীকে ধ্বংযজ্ঞে সহায়তা করতে থাকে। কিন্তু মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধার ভীতু না হয়ে ১৭ জুলাই ঘিওর থানা আক্রমণ করে। হস্তগত করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ। মানিকগঞ্জে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে খ্যাত গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধ এ যদ্ধেু এক জন কর্নেলসহ ৮১জন পাকবাহিনী নিহত হয়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা হানাদার মুক্ত হয়। ঐ দিন বিজয়ীর বেশে মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে সমবেত হন। আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল হক চান মিয়ার সভাপতিত্বে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন যুদ্ধে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ জন মুক্তিসেনা পঙ্গু হয়ে যান। ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পান। খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার (অবঃ) বদরুল আলম (বীর প্রতীক ), ইব্রাহীম খান (বীর প্রতীক ), শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতীক) এবং মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)।
বিজয়ের এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মানিকগঞ্জে প্রতি বছর উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা ১৫ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। জেলার মুক্তিযুদ্ধারা ১৯৯১ সাল থেকে এ মেলা পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু এবার করোনার কারনে মেলা বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ