সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ও টাঙ্গাইলের নাগরপুরের রনির প্রচেষ্টায় হারিয়ে যাওয়ার প্রায় এক যুগ পর দিনাজপুরের দূর্গা ফিরে পেল তার পরিবার। মানবতা যে এখনো হারিয়ে যায়নি তা আবারও প্রমাণ করলেন নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান রনি।
রনি দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর মানসিক ভারসাম্যহীন দূর্গাকে আশ্রয় দিয়ে তার সকল দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নিয়েছিলেন। সেই সাথে তার পরিচয় ও পরিবারের সন্ধান করতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালাতে থাকেন। কোনো উপায় না পেয়ে রনি ফেসবুকে মেয়েটির সন্ধান পেতে ছবিসহ একটি পোস্ট দেন। আর ফেসবুকের কল্যাণে পাওয়া যায় মেয়েটির পরিবারের সন্ধান।
ধুবড়িয়া বাজার বনিক সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান রনি বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটিকে ২০১০ সালের দিকে ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে দেখি। মেয়েটিকে তার নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সে কিছুই বলতে পারছিল না। তখন আমি তাকে আমার বাড়িতে এনে আশ্রয় দেই। আমি নাম পরিচয়হীন মেয়েটির নাম দেই লাইলি।
সেই সাথে মেয়েটিকে তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকি। দূর্গা দীর্ঘ আট বছর কোনো প্রকার কথা বলতে পারেনি। অবশেষে দীর্ঘ ১১ বছর পর এলাকার মানুষের সহযোগিতায় বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা আওলাদ হোসেন লিটন ভাইয়ের মাধ্যমে মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পাই। জানা যায়, লাইলির আসল নাম দূর্গা রানী। স্বামীর নাম রমেশ। বাড়ি দিনাজপুরের সস্তীতলা শহীদুল কলোনিতে। মেয়েটির বাবার বাড়ি বগুড়া জেলার সান্তাহারের সুইপার কলোনিতে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দূর্গাকে তার স্বামী ও তার ভাইদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় মেয়েটির আশ্রয়দাতা রনি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, মেয়েটিকে তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। মেয়েটি যেন বাকি জীবনটা তার পরিবারের সাথে সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে পারে সৃষ্টিকর্তার নিকট সেই প্রার্থনা করি।
স্ত্রীকে দীর্ঘ এক যুগ পর ফিরে পেয়ে রমেশ হরিজন বলেন, প্রায় ১১ বছর রনি ভাই আমার স্ত্রীকে যত্নে লালন-পালন করে আজ আমার কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এটা মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। আমার স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমার দুই মেয়ে তাদের মাকে কাছে পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। রনি ভাইকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. আওলাদ হোসেন লিটন বলেন, আমরা যে কাজটি করতে পারিনি রনি তা করে দেখিয়েছে। মানবতা আজও বেঁচে আছে এটা তারই সাক্ষ্য বহন করে। দিনাজপুরে বসবাসকারী আমার ভাই দীলিপের সাথে দূর্গার (লাইলি) বিষয়ে আলাপ করলে, দিলিপ তার ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট করলে তার ফেসবুকের শতশত বন্ধুরা বিষয়টি শেয়ার করে। একপর্যায়ে হরিজন সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ হওয়ায় পরিচয় নিশ্চিত হয়ে দূর্গাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই