৪ আগস্ট, ২০২১ ১১:২৫

ঘুরগার বিলে লাল সাদা শাপলার সৌন্দর্যের হাতছানি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

ঘুরগার বিলে লাল সাদা শাপলার সৌন্দর্যের হাতছানি

লাল ও সাদা শাপলা বাড়িয়ে দিয়েছে বিলের সৌন্দর্যকে

ঘুরগার বিল। এটির অবস্থান কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর, বাতাঘাসী ইউনিয়ন, দাউদকান্দির দক্ষিণ ইলিয়টগঞ্জ ও চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এই বিলের আয়তন প্রায় শত একর।

বিলের দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি ও বর্ণিল জলজ উদ্ভিদের সিগ্ধতা দর্শনার্থীদের মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। বিলের লাল সাদা শাপলার মায়াবি সৌন্দর্যের হাতছানিতে সেখানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কুটম্বপুর থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে গল্লাই যাওয়া যায়। তারপর হাঁটা পথ পেরিয়ে ঘুরগার বিল। 

সূত্র মতে, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা লাল ও সাদা শাপলা বিলের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিলে প্রায় ৫০ রকমের বেশি দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। রয়েছে বিবিধ প্রজাতির জলজ প্রাণী ও মৌসুমি পাখি। পানিতে নিমজ্জিত আছে বিভিন্ন প্রজাতির শৈবালসহ নানা জলজ উদ্ভিদ। 

বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মীরাখোলা গ্রামের পাশে খালে বাঁধা অনেক গুলো ছোট নৌকা। অনেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। ছোট নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরছেন। খালের স্বচ্ছ জলে হাত ভিজিয়ে সুখানুভূতি নিচ্ছেন। পরিবারের ছোট সদস্যদের জলজ উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। কেউ শাপলা তুলছেন। কেউ ছবি বা সেলফিতে ব্যস্ত। কেউ গলা ছেড়ে গাইছেন, ওরে নীল দরিয়া দেরে আমায় দে ছাড়িয়া...। অপরদিকে, দূরের কোনো নৌকায় সাউন্ড বক্সে বাজছে আঞ্চলিক গান। এই সময়ে ঘুরগার বিল আনন্দ বিলে রূপ নেয়।

চান্দিনার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নেহাশীষ দাশ তার একটি লেখা উল্লেখ করেন, কথিত আছে-জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হেলিকপ্টারযোগে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ বিল পরিদর্শন করেছিলেন। উদ্দেশ্য দেশের প্রক্ষাপটে এ বিলের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই। কিন্তু ৭৫' এর নির্মম ঘটনার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের আর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। অথচ এটি হতে পারতো আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট কিংবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। গড়ে উঠতো পাখি ও জলজ প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল। 

স্থানীয় কৈকরই গ্রামের বাসিন্দা মহিউদ্দিন আকাশ বলেন, আমাদের পাশের গ্রাম গল্লাইয়ে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা সেখানের শিক্ষার্থী। গল্লাইয়ের পাশে ঘুরগার বিল। ঘুরগার বিলের জীব বৈচিত্র্য আমাদের প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।  

ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষাবিদ মতিন সৈকত বলেন, শৈশব থেকে এই বিলের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি শুনে আসছি। কেউ বলেন, ঘুরগা নামে এক ধরনের পোকার প্রচুর বিচরণ ছিল এই বিলে। সেই পোকার নামে এটির নামকরণ হয় ঘুরগার বিল। আবার কেউ বলেন, এতো বড় বিল ঘুরতে ঘুরতে শেষ করা যায় না বলে এর নাম ঘুরার বিল বা ঘুরগার বিল। এই বিল সংরক্ষণ জরুরি। এতে প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি চিত্ত বিনোদনেরও সুযোগ রয়েছে।   

বাতাঘাসী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম বলেন, এটি উপজেলার একটি দর্শনীয় স্থান। বর্ষা মৌসুমে দূর-দূরান্ত দেখে মানুষ এখানে বেড়াতে আসে।

চান্দিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুন নাহার বলেন, ঘুরগার বিলটি সম্পর্কে স্থানীয় ভাবে জেনেছি, এখানে বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। যা পুরো চান্দিনা উপজেলার চাহিদা মেটাতে পারে। বিলের মাছ উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি ও সৌন্দর্য সংরক্ষণের বিষয়ে আমরা মনোযোগ দিব।  

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর