২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৪৯

কুড়িগ্রামে চলতি বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে চলতি বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি

কুড়িগ্রামে চলতি বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি।

কুড়িগ্রামে চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। সদ্য রোপণ করা আমন ধান, বীজতলা, বিভিন্ন প্রকার শাকসবজিসহ মৎস্য চাষে কৃষকরা মারাত্মভাবে ক্ষতির শিকার হন এবারের বন্যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বন্যায় জেলার ২৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে যায়, যার অধিকাংশই পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, চলতি বন্যায় জেলার ২৯১টি পুকুরের মাছ পাড় ভেঙে ভেসে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রায় ২৬২ জন মৎসজীবি। চলতি মৌসুমে দুই সপ্তাহের বন্যায় শুধুমাত্র কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ৩১ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৯ জন কৃষক। এছাড়াও পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় মৎস বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ৭৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ২১ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সদ্য রোপণকৃত রোপা আমনের। এসময়ে পুরো জেলায় ২৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল। ফলে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৭৯৬ হেক্টর রোপা আমন এবং আংশিক ক্ষতির পরিমাণ ২৫ হাজার ৪০০ হেক্টর।

দেরিতে বন্যার কারণে শাকসবজি চাষিরা কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার জলমগ্ন হওয়া ১ হাজার ১৯৫ হেক্টর সবজির মধ্যে ৬১ হেক্টর শাকসবজি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। অপরদিকে, ৬৭ হেক্টর বীজতলা পচে সম্পূর্ণ চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদর, চিলমারী, নাগেশ্বরী ও উলিপুর উপজেলা। সদরে ৭৯২ হেক্টর, চিলমারীতে ৫১৪ হেক্টর, নাগেশ্বরীতে ৪৯৫ হেক্টর, উলিপুরে ৩৯৮ হেক্টর, রৌমারীতে ৩০৮ হেক্টর, চর রাজিবপুরে ১৬২ হেক্টর, ফুলবাড়ীতে ১২৫ হেক্টর, ভুরুঙ্গামারীতে ১২০ হেক্টর ও রাজারহাটে ১০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জেলা মৎস কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, চলতি বন্যায় ৪৪ দশমিক ৬০ হেক্টর আয়তনের ২৯১টি পুকুর প্লাবিত হয়ে ৬৪ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬২ জন মৎস্য চাষি এবং মোট ক্ষতি হয়েছে ৭৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা।

জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার জানান, এবারের বন্যায় গো-চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গবাদি পশুর জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম সদর ও চিলমারীতে এই ক্ষতিটি বেশি হয়েছে। সরকার ক্ষতির দিকটি বিবেচনা করে ৩১ লাখ ৪২ হাজার টাকার গো-খাদ্য প্রণোদনা দিচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, চর এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা স্থানীয় জাতের ধান ছিটিয়ে নতুন করে রোপণ শুরু করেছেন। এছাড়াও সরকারিভাবে যে বীজতলা করে দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেও কৃষক বীজ নিয়ে কাজে লাগাচ্ছে। এতে করে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর