ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র কারণে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বলবৎ থাকায় সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে গিয়ে আটকা পড়া প্রায় দেড় হাজারের বেশি পর্যটক আজ সোমবারও ফিরতে পারেনি। তবে দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটকেরা ভালো রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী।
শনিবার বিকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি করে। এরপর দুর্ঘটনা এড়াতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, সেন্টমার্টিন–কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন-চট্টগ্রাম নৌপথে চলাচলকারী সব ধরনের পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়ার পাশাপাশি সতর্ক সংকেত প্রত্যাহার না করায় ওই তিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে না পারায় কোনো পর্যটক ফিরতে পারেননি। অন্যদিকে সাগর উত্তাল থাকায় যাত্রী নিয়ে কোনো ট্রলারকে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে অনুমতি দেয়নি স্থানীয় কোস্টগার্ড।
সেন্টমার্টিন আটকা পড়া পর্যটক ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা রায়ান বলেন, পরিবার নিয়ে একদিনের জন্য সেন্টমার্টিন এসেছিলাম কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে আটকা পড়ে গেছি, বিশাল সমস্যায় আছি। আমার অফিস করতে হবে তাই বড় টেনশনে আছি, কবে ফিরতে পারব এখনও নিশ্চিত নয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভ্রমণে আসা আরও এক পর্যটক ইফতি বলেন, আমরা ৮ জন বন্ধু-বান্ধব মিলে সেন্টমার্টিন বেড়াতে এসেছিলাম কিন্তু দ্বীপে আটকা পড়ে যাওয়ায় অনেক সমস্যায় আছি, টাকা-পয়সা যা নিয়ে এসেছিলাম শেষ হয়ে গেছে।
ঢাকার গাজীপুর থেকে পরিবারের আটজন সদস্যসহ ভ্রমণে আসা ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, বেড়াতে এসে আটকা পড়ে গেলাম। ঘূর্ণিঝড়ের সংকেতের কথা শুনে প্রথমে ভয় পেলেও এখন আকাশে তারার ঝলমল দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। রাতের সেন্টমার্টিনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে খুবই আনন্দ লাগছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতের কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাগরও উত্তাল রয়েছে। দল বেঁধে পর্যটকেরা বিচরণ করছেন সৈকতসহ বিভিন্ন এলাকায়। রাতে আকাশে প্রচুর তারা দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রের পানি অন্য দিনের চেয়ে ঝলমল করছে। এসব দেখতে পর্যটকেরা সৈকতে ভিড় করছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফ অঞ্চলের পরিদর্শক আমজাদ হোসেন বলেন, শনিবার টেকনাফ থেকে সকালে ছেড়ে যাওয়া ছয়টি জাহাজ সন্ধ্যার দিকে টেকনাফের পথে ছিল। ওই দিন ৬টি জাহাজে ১ হাজার ৬০৩ জন পর্যটক দ্বীপে বেড়াতে গেলেও ৫ শতাধিক পর্যটক স্বেচ্ছায় রাত্রিযাপনের জন্য সেন্টমার্টিনে রয়েছেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়ার সতর্কসংকেত বলবৎ থাকায় টেকনাফ থেকে কোনো জাহাজ ছেড়ে যেতে পারেনি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে। দ্বীপে অবস্থান করা পর্যটকেরাও ফিরতে পারেননি।
সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, টেকনাফের পাশাপাশি কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম–সেন্টমার্টিন হয়ে আসা দেড় হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করছেন। আটকে পড়া পর্যটকেরা ভালো রয়েছেন। অধিকাংশ পর্যটকেরা সমুদ্রসৈকতের কোমরসমান পানিতে স্নান ও সৈকতে বিচরণের মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছেন। তবে কোনো ধরনের পর্যটক হয়রানি যাতে না ঘটে তার জন্য বিচকর্মীদের দিয়ে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ