বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে বিআইআরএস প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি ওয়ান টাইম প্লেট ও গ্লাস তৈরির ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে ৫ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এতে ওই ফ্যাক্টরির প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের হবীর মোড় এলাকায় এই আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিআইআরএস প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের এই ফ্যাক্টরির উৎপাদন শুরু হয়। এই কারখানার স্বত্বাধিকারী মোট চারজন। তারা হলেন-সান্তাহার পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু, ইসমাঈল হোসেন, জিয়াউল নাছিম রাঙ্গা ও মনোয়ার হোসেন।
ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী ও সান্তাহার পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু বলেন, মঙ্গলবার সকালে ৪৫ জন শ্রমিক ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করে। হঠাৎ বেলা সাড়ে ১১টায় মেশিন চলা অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়।
মেয়র আরও বলেন, আগুনে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের ধারণা, রিসাইকেলিং মেশিন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে। তবে ফ্যাক্টরির আশপাশে বেশ কিছু স্থাপনা থাকলেও সেখানে আগুন ছড়িয়ে পড়েনি। আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়লে কারখানাটির আশপাশে বিপুল পরিমাণ উৎসুক মানুষের সমাগম ঘটে। ফলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গাড়িগুলো পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়।
আদমদীঘি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ রুহুল আমীন বলেন, ১১টা ৫৫ মিনিটে খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুর ২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। ফায়ার সার্ভিসের বগুড়া ও নওগাঁর ১৮টি ইউনিট কাজ চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ফ্যাক্টরির ভেতর থেকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পাঁচজন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কারখানার একটি রিসাইকেলিং মেশিনের অধিক তাপমাত্রা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটেছে। এসময় বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহত পাঁচজন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, নিহতদের পরিচয় তখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
তবে স্থানীয় সূত্র ও মৃত সিয়ামের বাবা লুৎফর রহামান জানান, নিহতদের পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন-সান্তাহার পৌর এলাকার কোমল দোগাছী গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে সিয়াম হোসেন (১৩), সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিরা গ্রামের নাছির উদ্দীনের ছেলে শাহজাহান আলী (২৪), সান্তাহরের পশ্চিম সিংড়া গ্রামের ওহায়েদের ভাগ্নে বিজয় (১৪) ও সান্তাহার পৌর এলাকার বেলাল হোসেন (৩৪)। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তাদের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় তাদের স্বজনরা ধারণা করছেন নিহত ওই চারজন তাদের পরিবারের সদস্য। তবে উদ্ধারকৃত মরদেহগুলো সম্পূর্ণভাবে আগুণে দগ্ধ ও বিকৃত হওয়ায় তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সাথে সাথে আদমদীঘি উপজেলার নির্বাহী অফিসার শ্রাবণী রায়, থানার ওসি জালাল উদ্দীন, সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। বিকেল ৩টার দিকে বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক ও ফ্যাক্টরির তত্ত্বাবধায়ক তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই