বিজয় দিবসের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিন দিনের ছুটি থাকায় বান্দরবানের পর্যটন স্থানগুলোতে প্রচুর জনসমাগম হয়েছে। পর্যটক বাড়ায় খালি নেই হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের কোনো কক্ষ।
শুক্রবার সকালে বান্দরবান বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে যাওয়া-আসার কোনো বাসেই টিকিট নেই। পর্যটকবহনকারী বান্দরবান জিপ-মাইক্রোবাস-চাঁদের গাড়ির সব বুকিং সকাল ৮টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট দেখতে আসা পর্যটকরা গাড়ি না পেয়ে ক্ষোভে বুকিং কাউন্টার ঘিরে রেখেছেন।
বান্দরবান জিপ-মাইক্রোবাস-চাঁদের গাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিরুল আলম জানিয়েছেন, সমিতির অধীনে ৪ শতাধিক গাড়ি রয়েছে। সেগুলোর প্রায় সবগুলোই কয়েকদিন আগে বুকিং হয়ে যায়। অল্প যে কয়টি গাড়ি ছিল, সেগুলো ভোর হওয়ার আগেই বুকিং হয়ে গেছে। এই অবস্থায় আগে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো ফিরে না আসা পর্যন্ত নতুন কোনো বুকিং নেওয়া যাচ্ছে না।
বান্দরবান শহরের মেঘবাড়ি ইকো-রিসোর্টের মালিক ফরহাদ আলী খান জানান, তাদের রিসোর্টে ৭টি কটেজ রয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের চাহিদার মুখে আরও প্রায় ৩০টি তাঁবু খাটিয়ে সেখানে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
বান্দরবান হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ জানান, টানা ছুটি থাকায় এবং ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই বান্দরবান জেলার হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট ও অবকাশ কেন্দ্রসহ সুলভ মানের সব হোটেলের কক্ষগুলো আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ফলে শেষদিকে বান্দরবানে বেড়াতে আসার পরিকল্পনাকারীদের বিপাকে পড়তে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের এমন অসুবিধায় আমরা খুবই দুঃখিত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাদের জন্য আমরা কিছুই করতে পারছি না। তাই টানা কোনো ছুটির সময় বান্দরবানে বেড়াতে আসার আগে-ভাগে হোটেল কক্ষ আগাম বুকিং দিয়ে রাখা দরকার।
শুক্রবার দুপুরে বান্দরবান শহরের কাছে রুপালী ঝর্ণা স্পটে গিয়ে দেখা গেছে, ডিজেল চালিত মাহিন্দ্র ট্যাক্সি, সিএনজি চালিত ট্যাক্সি এবং অন্যান্য যানবাহন নিয়ে ৭০০-৮০০ মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছেন। শীত মৌসুম আসায় এই জলপ্রপাতে পানির বেগ কমে আসলেও গাড়ির অভাবে দূরে যেতে না পেরে এখানে এসে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হচ্ছে বলে কয়েকজন পর্যটক জানিয়েছেন।
বান্দরবানের ৩ প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে নীলগিরি এবং মেঘলাতে পর্যটকদের সুযোগ থাকলেও বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে কনসার্টের আয়োজন থাকায় নীলাচলে পর্যটকদের ভ্রমণ সীমিত করে দেওয়া হয়। এতেও বিপাকে পড়েছেন পরিবারের সদস্যদের নীলাচল দেখাতে নিয়ে আসা অভিভাবকরা।
হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট ব্যবসায়ী এবং ট্যুরিস্ট ট্রান্সপোর্ট অপারেটররা জানিয়েছেন, গত তিনদিন ধরে ১ লাখেরও বেশি পর্যটক বান্দরবানে অবস্থান করছেন। এ কারণে রাস্তাঘাটেও ব্যাপক ট্রাফিক জ্যামের মোকাবিলা করতে হচ্ছে পর্যটকদের।
বান্দরবান কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন এলাকায় ৩টি সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। এ কারণে দিনে প্রায় পুরোটা সময় ধরে বাস স্টেশনের দুই পাশে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ জট লেগে থাকছে। রেইচা এলাকায় সেনাবাহিনী-পুলিশ চেকপোস্টের দুই পাশেও ট্রাফিক জ্যাম লেগে আছে। এরপরও বেশ কয়েকজন পর্যটক বলেছেন, বান্দরবান ঘুরতে এসে সবুজ প্রকৃতি, খোলা আকাশ এবং উঁচু উঁচু পাহাড় দেখে তাদের আশা মিটেছে।
চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা সুমন চৌধুরী বলেন, নীলগিরি যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরিবারের ১২ জন সদস্যদের নিয়ে বান্দরবান বেড়াতে আসেন। কিন্তু কোনো হোটেল-মোটেলে রুম না পেয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে তাদের উঠতে হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় জিপ, মাইক্রোবাস, চাঁদের গাড়ি কাউন্টারে এসেও তিনি কোনো গাড়ি পাননি। কাউন্টারের লাইনম্যান তাকে বলেছেন, দুপুরের পর কাছাকাছি স্পটে যাওয়া কিছু গাড়ি ফিরে আসলে আবার নতুন করে বুকিং দেওয়া শুরু হবে।
সুমন চৌধুরী আরও বলেন, তিনি প্রায়ই বান্দরবানে আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু অতীতে কোনো সময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি তাকে হতে হয়নি।
এদিকে, ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ২০ জনের একটি শিক্ষার্থী দল বৃহস্পতিবার বিকেলে বান্দরবানে এসে কোনো রুম না পেয়ে নির্মাণাধীন একটি ভবনের পাঁচ তলায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে ফ্লোরিং করে থাকার সুযোগ পেয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই