ফরিদপুরের চরাঞ্চলের অনাবাদি জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে কুসুম ফুলের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আনিসুর রহমান ও লুলু আল মারজান নামের দুই ভাই। তাদের দেখাদেখি শিক্ষিত বেকার যুবকদের অনেকেই বাহারী রঙের এ ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। নানা পুষ্টিগুণে ভরা এবং মানবদেহের জন্য ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ কুসুম ফুলের তেল বেশ উপকারী। তাছাড়া পাখীর খাবার হিসাবে কুসুম ফুলের বীজ বেশ জনপ্রিয়। গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে কুসুম ফুল চাষ করে লাভবান হন তারা। এবার এক বিঘা জমিতে করেছেন এ ফুলের চাষ। নানা রঙের এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন অনেকেই।
ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নে চরাঞ্চলের বালু মিশ্রিত বিশাল অংশের জমি গুলো পতিত হিসাবেই পড়ে থাকতো। কেউ কখনো এসব পতিত জমিতে কোন কিছু আবাদের স্বপ্নও দেখতোনা। অনেকেই এসব জমিতে বাদামের আবাদের জন্য তৈরী করলেও এসব জমিতে বাদাম তেমন একটা ভালো হয়নি। ফলে তারা বাদাম আবাদও বাদ দেন। কিন্তু পতিত এসব অনাবাদি জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে কুসুম ফুলের চাষ করেন আনিসুর রহমান। গত বছর এ ফুলের চাষ করে তা বিক্রি করে বেশ লাভবান হন তিনি। কোন রকম পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠা কুসুম ফুলের বীজ থেকে তেল বানিয়ে নিজে সেই তেল খাচ্ছেন এবং কয়েক জনের কাছে সেই তেলও বিক্রি করছেন। আনিসুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে এসব জমি গুলো পতিত হিসাবেই পড়ে ছিল। গত বছর কুসুম ফুলের বীজ সংগ্রহ করে তা লাগিয়ে ছিলেন। এ বছর অধিক পরিমান জমিতে তিনি এ ফুলের চাষ করেছেন। বীজ লাগানো ছাড়া তেমন কোন পরিচর্যাই করতে হয়না। ফলে প্রায় বিনা পুজিতেই কুসুম ফুলের চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
লুলু আল মারজান জানান, তার ভাইয়ের দেখাদেখি তিনি এ বছর ৩৩ শতাংশ জমিতে কুসুম ফুলের চাষ করেছেন। এজন্য তার খরচ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। ফুলের বীজ থেকে তিনি লাখ টাকা আয় করার কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, কুসুম ফুলের তেল তেমন একটা জনপ্রিয় না হলেও এখন অনেকেই এই তেলের গুনাগুন সর্ম্পকে জানতে পারছে। অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছে বীজ নিতে। তেলের পাশাপাশি কুসুম ফুলের বীজ পাখীর জনপ্রিয় একটি খাদ্য। ফলে যারা পাখীর ব্যবসা করেন তারা বীজ কিনতে আসেন। চরাঞ্চলের অনাবাদি কয়েক বিঘা জমিতে আগামীতে এ ফুলের আবাদ করা হবে।
লাল, হলুদ, গোলাপী, সোনালী, মেজেন্ডাসহ বাহারী রঙের কুসুম ফুলের সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে ভিড় করছেন। ছবি তোলার পাশাপাশি তারা সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েও দিচ্ছেন। ফলে অনেকের কাছে অপরিচিত এ ফুলটি এখন জনপ্রিয়তার তালিকায় স্থান পেতে যাচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মোঃ হযরত আলী জানান, চরের অনাবাদি ও অনুর্বর জমি গুলোকে কাজে লাগাতে কুসুম ফুল আবাদের বিকল্প নেই। যারা কুসুম ফুল চাষে আগ্রহী রয়েছেন তাদের সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে। এ বছর ফরিদপুর জেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে বাহারী রঙের কুসুম ফুলের আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১৪০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদিত হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন