রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর গ্রামে চার পরিবারের ১১টি বসতঘর পুড়িয়ে ও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাঁচদিন ধরে ২০ সদস্য খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। গত রবিবার থেকে বসন্তপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনসহ চার পরিবারের ২০ সদস্য খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ওই দিন সকালে শ’খানেক মানুষ এসে জালাল উদ্দিন ও তার ছেলেদের ১১টি আধপাকা ও টিনের ঘরে আগুন দিয়ে তা গুঁড়িয়ে দেয়।
গত বুধবার দুপুরে মাটি কাটার যন্ত্র নিয়ে এসে বাকি যা ছিল সেগুলোও তছনছ করে দেওয়া হয়। সেদিনও আরেক দফা আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জেলা আদালতে গত ৮ মার্চ মামলা হয়েছে। মামলায় ১০ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে ২৪ কাটা জমি গাহানু সরদারের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকায় বায়না করেন জালাল উদ্দিন। তখন গাহানু জমি বিক্রির জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে অনুমতির আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোদাগাড়ী ভূমি কার্যালয়কে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য বলা হয়। গাহানু কিছুদিন পর মারা যান। এ কারণে তখন জমির কবলা দলিল করা যায়নি। তখন গাহানুর ছেলে জহর লাল ও মহর লাল প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন না।
পরে জহর ও মহল প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাদের কাছ থেকে জমিটি কেনার চেষ্টা করেন। কিন্তু জহর ও মহর তা মানছিলেন না। ৬ মার্চ সকালে জহর ও মহর কয়েক’শ মানুষ নিয়ে বাড়ি দখল করতে আসে। তাদের হাতে ছিল লাঠি, ফালা, কুড়াল, কোদালসহ দেশীয় অস্ত্র। তারা প্রথমে বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করে। তখন বাড়ির সদস্যরা ভয়ে অন্য বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেদিন বাড়িঘরগুলো ভেঙে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে আবার বুধবার দুপুরে ভেকু নিয়ে এসে বাকি যা ছিল সেগুলোও তছনছ করে দেওয়া হয়। সেদিনও আরেক দফা আগুন দেওয়া হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান বলেন, দখলকৃত জমি উচ্ছেদ করতে হলে সিভিল কোর্টে মামলা করতে হবে। পরে নোটিশ দিয়ে উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু তারা যে আদিম-বর্বর কায়দায় জমিটা দখলে নিল, এটা বড় অপরাধ। জালাল উদ্দিন জানান, ৩৬ বছর ধরে তারা এখানে ছিলেন। এত দিন কেউ জমিজমা নিয়ে কিছু বলেনি। হঠাৎ করে এসেই বলে জমি খালি করতে হবে। ১০টি গরু, ২০টি ছাগল, ধান, চাল, শর্ষে, ফ্রিজ এমনকি বাড়ির টিন আর ইটও নিয়ে যায়। এখন আশপাশের মানুষজন যা দিচ্ছে, তাই খেয়ে জীবন কাটাচ্ছেন।
জালালের ছেলে মাহবুর রহমান বলেন, ৩৬ বছর ধরে তারা এ জমির খাজনা পরিশোধ করছেন। পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে তারা আদালতে গিয়ে মামলা করেছেন। এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান বলেন, কীভাবে জমির দখল নিয়েছে, এটা তারা জানেন না। আর আদালতে মামলা হয়েছে কি না, তাও তিনি জানেন না।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর