পটুয়াখালীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শিবু লাল দাস ও তার ব্যক্তিগত গাড়ি চালককে অপহরণের ঘটনায় জড়িত পটুয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান পারভেজসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ রবিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ ঘটনার মূল হোতা মো. মামুন ওরফে ল্যাড়া মামুনসহ তিনজন মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে ব্রিফিংয়ে।
এছাড়াও ল্যাংড়া মামুনসহ তিন পরিকল্পনাকারী ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক থাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটনের ডিবি টিম ও পটুয়াখালীর জেলার একাধিক টিম দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অপহরণের কাজে জড়িত সকলকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়।
এ মামলায় আসামিরা হলেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান পারভেজ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আক্তারুজ্জামান সুমন, তার ভাই ছাত্রলীগ কর্মী শামিম আহমেদ, মো. মিজানুর রহমান সাবু গাজী, মো. বিল্লাল ও সাব্বির হোসেন জুম্মান। এরা সকলেই পটুয়াখালীর শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
প্রেসব্রিফিং এ বলা হয়, গত ১১ এপ্রিল সোমবার রাতে শহরের নিজ বাসায় যাওয়ার সময় গলাচিপা উপজেলার হরিদেবপুর-শাখারিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের যে কোনো স্থান থেকে শিবু লাল দাস ও তার ব্যক্তিগত প্যাড়াডো গাড়ীসহ চালক মিরাজ অপহরণ হন। রাত ১২ টা ২ মিনিট ও ১টা ৫৯ মিনিটের সময় ভিকটিমের মোবাইল থেকে তার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায় ভিকটিমকে তাদের নিকট আটক করে রেখেছে একই তারিখ ১২ এপ্রিল দুপুর ২টার মধ্যে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিলে ভিকটিমকে তারা জীবিত অবস্থায় তাদের কাছে ফেরত দিবে নতুবা তাদের লাশ পাবেন।
পরে পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ এর নেতৃত্বে জেলা পুলিশের সকল টিম সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে শিবু লাল দাসের প্যারাডো গাড়িটি ১২ এপ্রিল রাত দেড়টায় বরগুনা জেলার আমতলী থানার রহমানিয়া ফিলিং স্টেশন হতে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গাড়িতে থাকা খেলনা পিস্তলের ভাঙা অংশ ও বস্তুগত সাক্ষ্য জব্দ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ ঘণ্টা পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের কাজীপাড়া এলাকায় এসপি কমপ্লেক্স শপিং সেন্টারের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ল্যাড়া মামুনের ভাড়া গোডাউন থেকে জীবিত অবস্থায় শিবু লাল দাস ও তার ড্রাইভার মিরাজকে দুই হাত, দুই পা, মুখে, চোখে রশি, কাপড় ও কসটেপ দ্বারা বাধা প্লাস্টিকের বস্তা ভর্তি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে বুদ্ধদেব দাস বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
শিবু লাল দাস উদ্ধারের পর চিকিৎসা শেষে পর দিন বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলার তদন্ত কাজে ভিকটিমের দেয়া তথ্য উপাত্ত, সিসিটিভির ফুটেজ, তথ্য প্রযুক্তির ও প্রচলিত নিয়মে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অত্র ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী নেতৃত্বদানকারীসহ অপহরণ কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের সনাক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থান হতে অভিযান পরিচালনা করে ১৬ এপ্রিল রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমদ্বয়কে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত হাত, পা, চোখ বাধার জন্য কসটেপ, গামছা, রশি, ২টি প্লাস্টিকের বস্তা এবং সন্দিগ্ধ চুল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও অপহরণ কাজে ব্যবহৃত অটো রিক্সা এবং অটোতে থাকা অপর বস্তাভর্তি মাতৃছায়া স্টীকার যুক্ত শপিংব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার মূল হোতা মো. মামুন ওরফে ল্যাংড়া মামুনসহ তিন পরিকল্পনাকারী ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক থাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটনের ডিবি টিম ও পটুয়াখালীর জেলার একাধিক টিম দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অপহরণের কাজে জড়িত সকলকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়েছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় ল্যাংড়া মামুনসহ ৩ জন অপহরণ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। শিবু লাল ও তার চালক অপহরণের পর হাত, পা, মুখ বেঁধে গাড়িতে উঠিয়ে এসডিও রোডস্থ মামুনের কথিত গোপন আস্তানায় এনে শারীরিকভাবে অত্যাচার করে আটক রাখা হয়। পরদিন তাকে গুম করার উদ্দেশ্যে তার গোপন আস্তানা হতে এসপি কমপ্লেক্সে এর নীচতলায় পাকিং এর মামুনের গুদামে রাখা হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন স্তরে ১০ হতে ১৫ জন অপহরণকারী জড়িত রয়েছে মর্মে জানা যায়।
শিবু লাল দাস পটুয়াখালী শহরের পুরান বাজার এলাকার বাসিন্দা। তিনি স্কয়ার টয়লেট্রিজ ও স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লি. এর পরিবেশক। ঠিকাদারি, ব্রিজের টোল আদায়ের ইজারা, খেয়াঘাট ইজারা, চাউলের আড়ৎসহবিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিবেশক ব্যবসা করে আসছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল