নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে ইজারাকৃত বিলে মাছ প্রবেশ করাতে গিয়ে বাঁধ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেন্দিপু ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান হাকিমের বিরুদ্ধে। প্রায় একমাস ধরে উপজেলার ধনু নদের কির্তনখোলা বাঁধ মেরামত করে আটকে রাখলেও অবশেষে মাছের জন্য বাঁধ ভেঙে দেওয়ার কারণে তলিয়ে গেছে কয়েকশ হেক্টর জমি। ভেসে গেছে গো-খাদ্য। এদিকে, রাত থেকে বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কার্মচারীসহ এলাকাবাসী ও কৃষক রয়েছে বাঁধে। অন্যদিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বাঁধ মেরামতে পাহাড়া দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উজানের ঢলে ধনুর পানি বেড়ে কির্তনখোলা বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। কিন্তু প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে বাঁধ ঠিক রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে মাছ ধরতে এবং মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে বন্দের পেটনা বিলের জন্য পুরনো বাঁধটি সোমবার রাতে কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, যখন সরকারসহ সব মানুষ প্রাণপণ চেষ্টা করছে ফসল রক্ষায়, ঠিক তখন মাছের জন্য পুরনো শক্ত বাঁধটি কেটে দেন ইজারাদার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। আর এতে ডুবন্ত সড়ক তলিয়ে পানি যাচ্ছে জগন্নাথপুর পশ্চিমের হাওরের ফসলি জমিতে। যেগুলোর ধান কাটতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে বলে জানান কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক ও সচেতন এলাকাবাসী মাহবুব, স্বাগত সরকার ও রাজু মিয়াসহ বাঁধ মেরামতে অবস্থান করা কৃষকরা জানান, দুর্যোগ অবস্থায় গত ১০ থেকে ১২ দিন পূর্বে চেয়রাম্যান বাঁধটি কাটতে চেষ্টা করে এবং বাঁধের নিচে দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে দেয়। পরে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা প্রশাসনকে জানালে এটি বন্ধ করা হয়। কিন্তু পাইপটি নিচে রয়ে যায়।
সোমবার রাতের আধাঁরে আবার পাইপ খোলার নাম করে বাঁধটি ভেঙে দিলে এলাকাবাসী খবর পেয়ে রাত থেকেই বাঁধ মেরামতে লেগে যান। এসময় চেয়ারম্যানকে ধাওয়া করলে তার মোটরসাইকেলটি বাঁধের এখানে পড়ে যায়। পরে সকালে মোটরসাইকেল তুলে দিলে তার লোকজন নিয়ে যায়।
ইজারাকৃত বিলে নতুন পানি ও মাছ প্রবেশ করাতে গিয়ে শত শত কৃষককে পথে বসিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ কৃষকরা সাবেক চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। এদিকে, বাঁধের কাছে উপস্থিত চেয়ারম্যানের শ্বশুর ও ভাতিজা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কে বা কারা করেছে, তা তারা দেখেননি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, চেয়ারম্যান না কে আমাদের দেখার বিষয় না। সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে মাছ আহরণ এটি মানুষের কাজ নয়। তিনি যত বড়ই শক্তিধর হোক না কেন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১০ থেকে ১২ দিন আগেও এই শক্ত বাঁধটিকে ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন চেয়ারম্যান। তখন আমরা এসে মেরামত করি। এখন যেটা করেছে, সেটা আর বলার মতো না।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনরত পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আগে বাঁধ মেরামত শেষ হোক। পরে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই