শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখীর ঝড়ের তান্ডবে দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ ও খানসামা উপজেলার কয়েকশ ঘরবাড়ী, আম-লিচু, ধান ও ভূট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় পার্বতীপুরে দেয়াল চাপায় এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে এবং শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বিভিন্ন স্থানে ৩০ জন আহত হয়েছে।
নিহত কিশোরী উম্মে কুলসুম (১৩) দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের শওকত আলীর মেয়ে।
নবাবগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে ফল, ফসলসহ ঘরবাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি ছাড়াও ঝড়ের তান্ডবে ২৪ জন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে রাতেই নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে। অন্যত্র ৬ জন আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ ও খানসামা উপজেলায় শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে ঘরবাড়ি গাছ-পালাসহ আমলিচু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত প্রায় সাড়ে ৮টার দিকে নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের কুষ্টিয়াপাড়া নামক স্থানে শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এখানে ২৪ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ঘটনাস্থলে যান এবং আহতদের উপজেলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের তথ্য মতে, ঝড় কবলিত এলাকায় ৭২০টি বাড়ীঘর ও ৩০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, ৪৮ হেক্টর বোরো ধান ১৭০ হেক্টর ভ’ট্টা ২ হেক্টর কলা ও ৪০০টি আম গাছের আম ক্ষতি হয়েছে। নবাবগঞ্জ পুলিশ জানায়, আহত হলেও কোন প্রাণহাণীর ঘটনা ঘটেনি। ঝড়ের কারনে আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য যাদের নেয়া হয়েছে তারা হলো, নবাবগঞ্জের কুষ্টিয়া পাড়া গ্রামের আজিজুল হক (৪০), মোছা. রুবিনা(২৭), মোছা. চান বানু (২২), মোছা. মাহফুজা (১৭), মোছা. মোবারেকা (২৪), মোছা. মাসুমা (৩), মোছা. ছাবিনা (২৫), মোছা. জান্নাতুন (২৫), মোছা. নুড়ি (১২), মো. শুভ (৭), মো. জান সুরুজ (৩০), মোছা মাহমুদা (২৮), মোছা. সাথী (১২), মো. মাহাবুব (৩০), মো. সুজন (৩৬), মো. ছামিউল (৪), মোছা. হ্যাপি (৩), মো. শওকত (৪৫), মোছা. মঞ্জুয়ারা (৩৫) মো. মামুন (৪৫) আ. মতিন (৭০), মো. জীবন (১৯), মোছা. রশিদা বেগম (৫০), ও আমজাদ আলী (৬২)। আহতরা শংকামুক্ত, তবে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে, পার্বতীপুরের হরিরামপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শাহ জানান, তারাবাবির নামাজ চলছিল। মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১০টার দিকে হঠাৎ করে কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হয়ে ১৫-২০মিনিট স্থায়ী হয়। এই ইউপির খাগড়াবন্ধ, মুন্সিপাড়া, মৌলভী পাড়াসহ কয়েক গ্রামকে লন্ডভন্ড করে দেয়। এতে ঘরের টিন উড়ে গিয়ে দেয়াল চাপায় ঘুমন্ত কিশোরী উম্মে কুলসুম মারা যায়। ঝড়ের সময় গোয়াল ঘর ভেঙে দুটি গরু ও একটি ছাগলের মৃত্যু হয়। ঝড়েরর সময় এইসব গ্রামের কাচা বাড়ী ছাড়াও পাকা বাড়ীঘরও ভেঙে পড়েছে। ২০০-২৫০ বাড়ী ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে, ধান ও ভ‚ট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতের ফসল নুয়ে পড়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ঝড়ে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাঈল ও পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি ইমাম জাফর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। বুধবার সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ