বগুড়ার শেরপুরে শেরুয়া থেকে ভবানীপুর বাজার আঞ্চলিক সড়ক মেরামত কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কাজই বন্ধ করে দেন এলাকাবাসী। একপর্যায়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে গতকাল বুধবার দুপুরে ওই সড়কে ফেলা তিন নম্বর ইটের খোয়া অপসারণ করা হয়। এরপরও ঠিকাদার সড়কটিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের রহস্যজনক নীরবতা ও সঠিক নজরদারি না থাকায় সড়ক মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া সরকারের লাখ লাখ টাকা নয়ছয় করে লোপাট হচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্টদের সেদিকে কোনো নজর নেই। এমনকি পিসির নির্ধারিত (কমিশন) টাকা পকেটে ভরে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন ওই অফিসের কর্তারা।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শেরুয়া থেকে ভবানীপুর বাজার পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়ক। এটির আয়তন প্রায় বারো কিলোমিটার। এর মধ্যে ছয় কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই করুণ। পাকা সড়কটির কাপের্টিং উঠে ছোট-বড় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে সড়কের একাধিক স্থানে তৈরি হওয়া বড় গর্তে পানি জমে জলাবদ্ধতা স্থায়ী আকার ধারণ করেছে। এছাড়া সড়কের বেশকিছু অংশ দেবে গেছে।
তাই চলতি বছরের শুরুতেই সড়কটি মেরামতের জন্য দুই কোটি পঁচাত্তর লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করা হয়। একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেন। এর মধ্যে কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও ফিরোজ কন্ট্রাকশন যৌথ কাজটি পান। কিন্তু তাদের নিকট কাজ কিনে নেন খাজা এন্টারপ্রাইজ। আর সাব-ঠিকাদার হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানটি বিগত দুই মাস আগে সড়ক মেরামত কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে সড়কে বালি ও ইটের খোয়া বিছানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদ, শরীফ আহম্মেদ, সোলায়মান আলীসহ একাধিক জানান, সড়ক মেরামতের জন্য যে মানের সামগ্রী ব্যবহার করার কথা ঠিকাদার তা দিচ্ছেন না। বিশেষ করে তিন নম্বর ইটের খোয়া সড়কে ফেলা হয়েছে। তাদেরকে বারবার নিষেধ করার পরও সেটি মানেননি তারা। এতে করে স্থানীয় লোকজনের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। একপর্যায়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের বাধার মুখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছু তিন নম্বর ইটের খোয়া সড়ক থেকে তুলে নিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপরও ওই সড়ক মেরামত কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে। এভাবে সড়কটি মেরামত করা হলে দ্রুতই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
স্থানীয় বিশালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক। সড়কের নিচু অংশে এবং পানি জমে থাকা গর্তগুলো বালি দিয়ে ভরাটের মাধ্যমে উঁচু না করেই খোয়া ফেলা হয়েছে। আর যেসব খোয়া ফেলা হয়েছে তাও নিম্নমানের। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা দেখেও না দেখার ভান করছেন। এমনকি যেনতেনভাবে দায়সারা কাজ করে সরকারি লাখ লাখ টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, কোনো নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়নি। তবে ভুলবশত ট্রাকে আসা কিছু তিন নম্বর ইটের খোয়া এলেও সেসব অপসারণ করা হয়েছে। এরপরও সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন এবং সড়ক মেরামত কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সড়কটি মেরামতে শিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। এরপরও মেরামত কাজে কোনো অনিয়ম করা হলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মৌখিক অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর