দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। এই সড়কটি বর্তমান সরকারের আমলে ৬ লেন হওয়ায় এবার ঈদে মানুষ সেই সুফল পাবে। নির্বিঘ্নে ঈদে ঘরমুখো মানুষ ফিরতে পারবে বাড়িতে। তবে কয়েকটি স্থানে নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় কিছুটা যানজটের আশঙ্কা তো থেকেই যায়। এবার সড়ক বিভাগ নির্মাণাধীন কয়েকটি উড়াল সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার মহাসড়কটিতে দূরপাল্লার গাড়ির চাপ বেশি দেখা গেলেও কোথাও কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি।
এ সড়ক দিয়ে প্রায় ২৩ থেকে ২৪টি জেলার ১২২টি রোডের যানবাহন চলাচল করে থাকে। রাজধানী ঢাকার সাথে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এই মহাসড়কটি। শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশ চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত রয়েছে ৬৫ কিলোমিটার। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের ভিড়ে এই মহাসড়কে সৃষ্টি হয় যানজটের। এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বিভাগ বলছে, যানজট নিরসনে এবার নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে মহাসড়কে ভোগান্তি হবে না। এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশে ৪টি সেক্টরে ভাগ করে ৭১৭ জন পুলিশ সদস্য কাজ করবে।
বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ২০/২১ হাজার যানবাহন সেতু পারাপার হয়। ঈদের আগে গড়ে ৩৫/৩৭ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। স্বাভাবিকের চেয়েও অধিক যানবাহন পারাপার হওয়ায় দুই লেনের সড়কে যানজট লেগে যায়। এ ছাড়া গত ঈদযাত্রায় এ মহাসড়ক দিয়ে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার হাজার গাড়ি পারাপার হয়েছে। প্রতিবছর ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন।
পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন। আবার এলেঙ্গা পর্যন্ত দুইপাশেই সার্ভিস লেন রয়েছে। এতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো মহাসড়কের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন সুবিধা নিয়ে দ্রুত চলে আসতে পারে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কটি দুই লেনের। এতে যানবাহন চার লেনের সুবিধায় দ্রুত এলেঙ্গা পর্যন্ত এসে আটকে যায় দুই লেনের মুখে। সেখান থেকেই যানবাহনগুলো ধীর গতিতে চলে যানজটের শুরু হয়। অনেক সময় সেতুর টোলের সমস্যার কারণেও টোল আদায় বন্ধ থাকে। তবে এবার যানজট নিরসনে সিরাজগঞ্জের নকলা ব্রিজ খুলে দেওয়া হয়েছে। একই সাথে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই ফ্লাইওভার ব্রিজও খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ঈদযাত্রায় মহাসড়কে চাপ কিছুটা কমবে। প্রথম দিকে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হলেও রমজানের শেষের দিকে যানজট না হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে পুলিশ বিভাগ।
এদিকে, মহাসড়কের পাশে টয়লেট না থাকায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাত্রীদের পড়তে হয় চরমে দুর্ভোগে। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটে যাত্রীদের দুর্ভোগের আশঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে ২৫টি অস্থায়ী পাবলিক টয়লেট। আর এমন উদ্যোগ নিয়েছেন কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নূর এ আলম সিদ্দিকী।
জানা যায়, প্রতি বছরই ঈদকে সামন রেখে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সড়কে লক্করঝক্কর এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করে। এসব গাড়ি হঠাৎ করেই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে উভয় পাশের গাড়ি থেমে পড়ে। এক পর্যায়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় চালকের অদক্ষতা, সড়ক দুর্ঘটনা এবং গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট হয়।
পুলিশ জানায়, মহাসড়কে জেলা পুলিশ, থানা পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশ মিলেয়ে মোট ৬১৭ জন পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। এছাড়াও একশ এপিপিএনের সদস্যও কাজ করবেন।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের মির্জাপুরের ধেরুয়া থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর গোলচত্বর পর্যন্ত এলাকাকে ৪ সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মির্জাপুরের ধেরুয়া ওভার ব্রিজ থেকে ঘারিন্দা পর্যন্ত এক নম্বর সেক্টর, ঘারিন্দা থেকে এলেঙ্গা ব্রিজ পর্যন্ত দুই নম্বর সেক্টর, এলেঙ্গা ব্রিজ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত তিন নম্বর সেক্টর এবং ময়মনসিংহ লিংক রোড থেকে মধুপুরের অরণখোলা পর্যন্ত চার নম্বর সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে।
এক নম্বর সেক্টরকে আবার দুইটি সাব সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। ধেরুয়া থেকে নাটিয়াপাড়া পর্যন্ত এক নম্বর সাব সেক্টর এবং নাটিয়াপাড়া থেকে ঘারিন্দা পর্যন্ত দুই নম্বর সাব সেক্টর।
তিন নম্বর সেক্টরে চারটি সাব সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এলেঙ্গা ব্রিজ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের সাত নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত এক নম্বর সাব সেক্টর, সাত নম্বর ব্রিজ থেকে ১৫ নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত দুই নম্বর সাব সেক্টর এবং ১৫ নম্বর ব্রিজ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর গোলচত্বর পর্যন্ত তিন নম্বর সাব সেক্টর এবং গোলচত্বর থেকে ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে ভূঞাপুর লিঙ্ক রোর্ড পর্যন্ত চার নম্বর সাব সেক্টর ভাগ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৩৩টি পিকেট টিম মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে ৩৩টি মোটরসাইকেল টিম এবং গুরত্বপূর্ণ লিংক রোডের মাথায় ১৩টি অস্থায়ী বাঁশকল স্থাপন করা হয়েছে। মহাসড়কে ৪টি কন্ট্রোল রুম রয়েছে এবং ৫টি রেকারও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৩টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এসব সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেও যানজট নিরসনে কাজ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড় ৯টি বুথ দিয়ে টোল আদায় ও পশ্চিম পাড়েও ৯টি বুথ দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। সার্বক্ষণিক আমাদের টোল প্লাজা সচল রাখা হবে। যদি সফটওয়্যারে সমস্যা হয়, তাহলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, যানজট নিরসনে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ব্যতিক্রম কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যে কারণে বিগত সময়ে মহাসড়কে যানজট তীব্র হয় সেগুলো সমাধান করা হয়েছে। আগের তুলনায় বর্তমানে সময়ে এই মহাসড়ক দিয়ে যাত্রীরা কম ভোগান্তিতেই বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আশা করছি। কারণ আমাদের প্রস্তুতি ভালো রয়েছে। এবার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নতুনত্ব নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যরা কাজ করবেন। মহাসড়কে পুলিশের পাশাপাশি একশ’ এপিপিএনের সদস্য যানজট নিরসনে কাজ করবে। সব মিলিয়ে ঈদযাত্রায় মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ৭১৭ জন পুলিশ সদস্য কাজ করবে। সার্বক্ষণিক মহাসড়েক জেলা, হাইওয়ে ও থানা পুলিশ সদস্যরা কাজ করবেন। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ৩ শিফটে এবং অন্য জায়গায় দুই শিফটে পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে। আশা করছি বড় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না হলে মহাসড়কে এবার যানজট হবে না।
বিডি প্রতিদিন/এমআই