ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ঈদের দিন দুপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় দুইজন নিহতের ঘটনায় ঘোষপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে ৮১ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নম্বর ০৩। ঘটনার পাঁচদিন পর শনিবার (৭ মে) দিবাগত রাতে থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামিকে আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
গত মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে গোহাইলবাড়ী-চরদৈতরকাঠি এলাকার শামচু মাস্টারের বাড়ি সংলগ্ন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে ঘোষপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খায়রুল শেখ (৪৭) ও গোহাইলবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ি মো. আকিদুল মোল্লা (৪৫) নামের দুইজন নিহত হয়। নিহত খায়রুল চরদৈতরকাঠি গ্রামের মো. মোসলেম শেখের ছেলে ও আকিদুল একই গ্রামের মৃত হাসেম মোল্লার ছেলে।
থানার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলাউদ্দিন আহমেদের সাথে গোহাইলবাড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা (গেজেট যাচাই-বাছাইধীন) মরহুম মো. বজলুর রহমানের ওরফে বজলু খালাসির এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় গোহাইলবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে আলাউদ্দিন আহমেদের বড় ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা জামান সিদ্দিকী ও মরহুম বজলুর রহমান ওরফে বজলু খালাসির ছেলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফ হোসেনের দুই প্যানেলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোস্তাফার প্যানেল বিজয়ী হয়ে পুনরায় তিনি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে।
গত মঙ্গলবার ঈদের দিন বৃষ্টির কারণে ঈদগাহ ও মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে দুইপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ইচ্ছানুযায়ী যার যার মত বিভিন্ন জায়গায় নামাজ আদায় করেন। দুপুর ২টার দিকে মোস্তফা জামানসহ নিহত-আহতরা গোহাইলবাড়ি বাজারের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় আসামিরা হতাহতদের উপর রামদাসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় মারাত্বক আহত মোস্তফার চাচাতো ভাই আকিদুল মোল্লা (৪৫), খায়রুল শেখ (৪৭) এবং তার আপন দুইভাই শারিরীক প্রতিবন্ধী মাসুদ আহমেদ (৪৭) ও আলমগীর আহমেদ (৫০)-সহ ৯ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আকিদুল মোল্লাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পাঁচদিন পর গপ্টপকাল শনিবার দিবাগত রাতে থানায় নিহতদের চাচাতো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জামান সিদ্দিকী বাদি হয়ে ৮১ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক আরও ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক মামুন ইসলাম জানান, মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি গোহাইলবাড়ি গ্রামের মো. নওশের শেখ (৪৫), ১২ নম্বর আসামি চরদৈতরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ও ঘোষপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন মোল্লা (৩৪), ৭০ নম্বর আসামি চন্ডিবিলা গ্রামের মতিয়ার রহমান (৪২) ও ৭২ নম্বর আসামি দেলোয়ার হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
ফরিদুপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) সার্কেল সুমন কর বলেন, ঈদের দিনে প্রতিপক্ষের হামলায় দুইজন নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনাস্থল এখন শান্ত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ