মোছাম্মৎ ফুলেজা খাতুন। তার বাড়ি উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের রানিয়াচং গ্রামে। জন্মের পর থেকেই তিনি দেখেছেন তার বাবা আরব আলী গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে সংসার চালিয়েছেন। ফুলেজার বয়স যখন ১৫ তখন তার বিয়ে হয় একই গ্রামের দিনমজুর আবকর মিয়ার সঙ্গে। দুই সন্তান জন্মের কিছুদিন পর স্বামী নিরুদ্দেশ হয়। দুই সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে খুব কষ্টে দিন কেটেছে তার।
ফুলেজা এখন ৪৫ বছরে পা রেখেছেন। জীবনের দীর্ঘ সময় চলে গেলেও নিজের মাথাগুজার ঠাঁইটুকু হয়নি। এখন তার একটি রঙিন টিনের ঘর হয়েছে। স্বপ্নের ঘর ও ঘরের দলিল পেয়ে তার চোখে-মুখে অন্যরকম উচ্ছ্বাস, যেন অধরা স্বপ্নের হাতছানি ধরা দিয়েছে ফুলেজার। অনুভূতির কথাগুলো বলতে বলতে ফুলেজার চোখের কোণে পানি চলে আসে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ হলরুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর ফুলেজার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
ফুলেজার মতো আরও ১২৫ জন গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার নিজের ঘর পেয়েছে। তাদেরও ছিল না নিজের কোনো ভূমি কিংবা ঘর। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থেকেছেন।
তাদের মধ্যে আরেকজন তাহমিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা স্বামী কেউ নেই। বয়সও হয়েছে অনেক। এখন আর আগের মতো কাম-কাজ করতাম পারি না। ছেলে থাকলে আয়-রোজগার কইরা আনত। দুইডা মাইয়া আছে। ঘর নাই হের লাইগ্যা মাইয়াডিরে বিয়া দিতাম পারতাছি না। এহন শেখ হাসিনা একটা ঘর দিছেন। হেই ঘরে ঘুমইতা পারুম। মাইয়াডিরেও বিয়া দিতে পারুম।’
জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের আরও উপস্থিত ছিলেন নাসিরনগর-১ আসনের সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাফি উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোনাব্বর হোসেন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান রুবিনা আক্তার, বীল মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাকী, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ সরকারসহ বিভিন্ন দফতরের প্রধান, ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, সুশিলসমাজের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠান শেষে নাসিরনগর উপজেলার ১২৫জন গৃহহীন ও ভূমিহীন উপকারভোগীদের মাঝে ঘর ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়।
বিডিপ্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ