নাটোর জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে সভাপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র কিনতে চাওয়ায় তিন শ্রমিককে মারধর করেছেন অন্য শ্রমিকরা। এ ঘটনার জেরে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন।
প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে একটি পক্ষ যেকোনও উপায়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার ও অপরপক্ষ সভাপতি পদে নির্বাচন না দিলে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
নির্বাচন স্থগিতের ঘটনায় শ্রমিকদের দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে শহরের চকরামপুর এলাকায় পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বুধবার দুপুর ১২টায় সভাপতি পদে মনোনয়ন কেনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে বাকবিতণ্ডার জেরে ইউনিয়নের সদস্য মিঠুন আলীসহ তিনজনকে মারপিট করে উত্তেজিত কয়েকজন তরুণ।
শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, দুপুর ১২টায় ইউনিয়ন কার্যালয়ে আসেন মিঠুন আলীসহ কয়েকজন শ্রমিক। তারা সভাপতি পদে মনোনয়ন কিনতে চাইলে নির্বাচন কমিশন জানায় রেজুলেশন থাকায় এ পদে মনোনয়ন বিক্রি হবে না। এ ঘোষণায় তারা উত্তেজিত হলে সাধারণ প্রতিপক্ষ শ্রমিকদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে তাদের তিনজনকে মারপিট করেন অন্য শ্রমিকরা। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্বাচন স্থগিত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা খাতুন।
পরিবহন শ্রমিক নান্নু শেখ ও অপুর্ব সরকার পলাশ বলেন, ১৯৮১ সালের পরে শ্রমিকরা সর্বসম্মতিক্রমে নাটোর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান কামরুল ইসলামকে আজীবন সভাপতি করে রেজুলেশন পাশ করে। সে সময় থেকে তিনি প্রতিটি দুঃসময়ে শ্রমিকদের পাশে থাকেন বলে তাকে এই সম্মানজনক পদটিতে আজীবনের জন্য রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত এই পদে কোনও নির্বাচন হয় না। তাই এ পদের জন্য কোনও মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়নি।
সভাপতি পদে মনোনয়ন কিনতে আসা মিঠুন আলী বলেন, সভাপতি পদটি কুক্ষিগত করে রাখার জন্যই নির্বাচন কমিশন এ পদে নির্বাচন দিচ্ছে না। একটি সংগঠনে আজীবন সভাপতি হিসেবে কেউ বছরের পর বছর থাকতে পারে না। এ ধরনের রেজুলেশন দেখতে চাইলে তারা তা দেখাতে পারেননি, বরং আমাকে মারপিট করেছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সৈয়দ মোর্ত্তোজা আলী বাবলু বলেন, তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন কার্যক্রম চলবে। কেননা সভাপতি পদে নির্বাচন হবে না মর্মে রেজুলেশন রয়েছে। ইউএনও নির্বাচন স্থগিতের কথা বলেছেন। এটা তার দায়িত্ব।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা খাতুন বলেন, সভাপতি পদে নির্বাচন না করার জন্য যে রেজুলেশনের কথা বলা হয়েছে, তা নির্বাচন কমিশন দেখাতে পারেনি। তাই নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। যদি রেজুলেশন দেখাতে পারে তবে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ভোটগ্রহণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।
সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ ফজলুর রহমান মোহমিন বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচন স্থগিতের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করবে। শ্রমিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
বিডি প্রতিদিন/কালাম