পাবনায় ইজারাসূত্রে পদ্মা নদীর মালিকানা দাবি করে জেলেদের মাছ ধরতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে। জেলেদের অভিযোগ, অন্য এলাকার জলমহাল ইজারার কাগজ দেখিয়ে চক্রটি ছিনিয়ে নিচ্ছে মাছ, জোর করে আদায় করা হচ্ছে টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন শতাধিক জেলে পরিবার।
বারবার অনুরোধেও কাজ না হওয়ায় ভুক্তভোগী জেলেরা আদালতে মামলা করেছেন। সরেজমিন পাবনার চরভবানীপুর এলাকার পদ্মা পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নদী পাড়ে বিষণ্ণ মনে বসে আছেন শতাধিক জেলে।
স্থানীয়রা জানান, ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছ থেকে যে শাখা নদীটি বেরিয়ে গেছে, সেটা পদ্মা নামেই পরিচিত। পশ্চিম বাহিরচর এলাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার ঘুরে নদীটি আবার মূল পদ্মায় মিলিত হয়েছে পাবনা সদরের চর শ্রীকৃষ্ণপুরে। সারা বছর হাঁটুপানি থাকলেও বর্ষায় দুই কূল উপচে পানি গড়ায় এই নদীতে।
জেলেরা জানান, কয়েক পুরুষ ধরে এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা চলে আশপাশের গ্রামের শতাধিক জেলে পরিবারের। চলতি বছর নদীতে পানি কম থাকায় মিলছে না মাছ। এমন দুর্দিনে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে চাঁদাবাজদের দাপট। ইজারাসূত্রে মালিকানার কথা বলে জেলেদের থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করছে সংঘবদ্ধ চক্র। চাঁদা না দিলে মারধরের পাশাপাশি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে সারা রাতের পরিশ্রমে শিকার করা মাছ। বর্ষা মৌসুম শুরু হলে ইজারার অজুহাতে জয়েনপুর, চরভবানীপর, রতনপুর ও ভগীরথপুর এলাকায় পুরো পদ্মা নদীতে নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। তবে অনুরোধ, প্রতিবাদ ও মানববন্ধনে কাজ না হওয়ায় আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা। তাতে আরও বেড়েছে নির্যাতন।
চরভবানীপুর গ্রামের জেলে আব্দুল আজিজ অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ৪৫ বছর ধরে এই নদীতে নৌকা নিয়ে জাল পেতে মাছ ধরি। কখনোই কেউ চাঁদা চায়নি। কিন্তু এ বছর আলাউদ্দিন ও খাদেমের দলবল বলছে পদ্মা নদী তারা লিজ নিয়েছে। আমাদের নদীতে নামতেই দিচ্ছে না।
একই গ্রামের জেলে সোলায়মান প্রামানিক বলেন, ‘বাপের জন্মে কখনো শুনিনি নদী লিজ হয়। আলাউদ্দিন কয় তাদের ট্যাক্স না দিয়ে নদীত নামা যাবি না। দুদিন আগে সারা রাত খাইটে কয়ডা মাছ পাইছিলাম। ওরা আইসে সব লিয়ে গেছে। এখন মাছ না মারলি আমরা খাবো কি? মামলা করার পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেচ্ছে।’
জেলেদের অভিযোগ ও মামলার নথির সূত্র ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর ১৬ মার্চ ইশ্বরদী উপজেলার জয়েনপুর এলাকায় টিএস কেস নম্বর ২১ ভুক্ত ২২ একর আয়তনের একটি কোল জলমহাল ৬৮ হাজার ৭৫০ টাকায় বাঁশেরবাদা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নেন মো. আলাউদ্দিন। তিনি ওই সমিতির সভাপতি।
জলমহালের অবস্থান ও সীমানার বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য না দিয়ে, উল্টো জেলেদের বিরুদ্ধেই দস্যুবৃত্তি ও জোর করে মাছ শিকারের অভিযোগ করেন আলাউদ্দিন। ইজারার কাগজে তার লিজ নেওয়া জলমহাল ইশ্বরদী উপজেলার হলেও নদীতে মালিকানা দাবির বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। সীমানার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কাগজ দেখাতে না পারলেও জেলেদের অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেন। আলাউদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জেলেরা আমার ইজারা নেওয়া এলাকায় মাছ শিকার করে। আমি তাতে বাধা দিয়েছি। নদীতে মাছ শিকারে বাধা বা চাঁদা দাবি করা হয়নি।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, জলমহাল ইজারা নীতিমালায় উন্মুক্ত নদী ইজারার সুযোগ নেই। তা দেয়াও হয়নি। জয়েনপুর মৌজায় কোল লিজ নিয়ে ইজারাদাররা নিজ সীমানার বাইরে মাছ শিকার করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই