সার সংকট ও দাম বেশি নেওয়ায় নাটোরের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সার সংকট দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছে। ফলে কৃষকরা কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার অনেক বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় বর্তমানে পটাশ সার মিলছেনা। চলতি মাসে বরাদ্দকৃত পটাশ সার সরবরাহ করা হলেও তা চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া আগামী মাসের জন্য পটাশ সার মজুদ নেই। সিন্ডিকেট করে এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মজুদদাররা। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করা হলেও অবৈধভাবে সার মুজদ করা ঠেকানো যাচ্ছে না। সার সংকট নিরসনে জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরাবর আবেদন জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নাটোর জেলায় চলতি মাসে ৫৬১২ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩৫৮৭ মেঃটন। ডিএপি ১২৯৪ মেঃটন চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ৫৮৫.৫৪ মেঃটন। টিএসপি ৯২৫ মেঃটনের বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ৭৬১ মেঃটন। এমওপি ৮৬৮ মেট্রিক টনের বিপরীতে পাওয়া গেছে ৫১৩ মেট্রিক টন।এমওপি সার কৃষকদের চাহিদা বেশী হওয়ায় অতিরিক্ত ৪৫০০ মেট্রিক টন বেশী বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই অতিরিক্ত এমওপি সারের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে রোববার পর্যন্ত এমওপি সার মজুদ রয়েছে ২৩১ মেট্রিক টন। যা সেপ্টেম্বর মাসে সরবরাহ করা হবে।
এদিকে, সিন্ডিকেট করে সারের সংকট তৈরির বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
কৃষকদের অভিযোগ, সার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে তারা সরকারের বেধে দেওয়া দর ও চাহিদা অনুযায়ী সার কিনতে পারছেন না। বেশি দাম দিয়েও ইউরিয়াসহ সব ধরনের সার পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ডিলারদের কাছে পটাশ ও ডিএপি সার পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষকরা আরোও অভিযোগ করে বলেন, সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ১১শ টাকা হলেও তার দাম নেওয়া হচ্ছে ১১৮০ টাকা, এমওপি ৭৫০ টাকার জায়গায় সাড়ে ৮শ, টিএসপি ১৩শ টাকা ও ৮শ টাকার ডিএপি সাড়ে ৮শ থেকে হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।কৃষকেরা বলছেন, সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই সার বের করে দিচ্ছেন। এ ছাড়া কিছু কিছু ডিলার দোকানে মূল্যতালিকা টাঙিয়ে রাখলেও সেই অনুযায়ী বিক্রি করছেন না। এমনকি সরকারি দরের রশিদ দিলেও বাড়তি দরের রশিদ দিচ্ছেন না।
সদর উপজেলার কাফুরিয়া গামের কৃষক মেহের আলী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার সারের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। আমরা সরকারী ডিলারদের কাছ থেকে সরাসরি সার কিনতে পারিনা। কৃষিকার্ড না থাকলে ডিলাররা সার দেয়না। তারা স্থানিয় সার ব্যবসায়িদের কাছে সার বিক্রি করে। তাদের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়।
নলডাঙ্গা উপজেলার হলুদ ঘর এলাকার কৃষক আলহাজ মিয়া জানান, তিনি দুই বস্তা তিনি দুই বস্তা ইউরিয়া কিনেছেন ১১৮০ টাকা করে। পটাশ সার না থাকায় কিনতে পারেননি।
ডিলার শুভাশীষ বলেন, কার্ড ধারিদের কাছে সরকারী মূল্যে সার বিক্রি করা হয়। তবে খুচরা বিক্রেতারা কৃষকের কাছে কতটাকা দিয়ে সার বিক্রি করে তা তদারকি করার সুযোগ নাই তাদের।
অভিযোগ রয়েছে, ডিলারদের নামে বরাদ্দকৃত সার সরবরাহেও অনিয়ম করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ডিলার বলেন, বিএডিসির গুদাম থেকে সার উত্তোলন করতে গেলে বরাদ্দকৃত সার উত্তোলনের ক্ষেত্রে তাদের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত সার দুদফা অথবা তিন দফায় সরবরাহ করা হয়। তবে বিশেষ বিশেষ ডিলারের ক্ষেত্রে এই শর্ত থাকেনা না।
বাফার সার গুদামে বিএডিসির গুদাম কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান জানান, বরাদ্দ অনুযায়ী সার ডিলারদের মধ্যে সার বিতরণ বা সরবরাহ করা হয়। এখানে কোন ধরনের সিন্ডিকেড নেই। বিএডিসির শ্রমিকরাই ডিলারদের মধ্যে সার সরবরাহ করে থাকেন। বরাদ্দের বাহিরে অতিরিক্ত বা কম সার সরবরাহ করা হয়না।
জেলা ফার্টিলাইজার সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, নাটোরে সার ডিলাররা বরাদ্দকৃত সার সরকারি নিয়মেই বিতরণ করে থাকেন। কোন ধরনের সিন্ডিকেট বা অনিয়মের সাথে তারা জড়িত নন। তবে এবার কৃষকদের চাহিদা একটু বেশী হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী পটাশ সার মিলছেনা। বর্তমানে পটাশ সারের মজুদ নেই। একারনে অতিরিক্ত পটাশ সারের চাহিদা চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বরাবরে আবেদন জানানো হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, নাটোরে সার নিয়ন্ত্রনে কোন সিন্ডিকেড নেই। এধরনের কোন অভিযোগও নেই। এ বিষয়ে রোববার অনুষ্ঠিত জেলা সার ও বীজ মনিটরিং সভায় বিস্তর আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সকলকে এবিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বাফার সার গুদামে বহিরাগত কোন গ্র“পের অস্তিত্ব নেই বলে তিনি জানান। যদি থাকে তবে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, নাটোরে সারের কোন সিন্ডিকেট থাকার বিষয়ে কোন ধরনের অভিযোগ আসেনি তার দপ্তরে। তবে এধরনের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে। এছাড়া ফার্টিলাইজার সমিতির আবেদনের বিষয়টি আইনগতভাবে যা করনীয় তাই করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ