চট্টগ্রাম র্যাব কার্যালয়ের নিজ অফিস রুম থেকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হওয়া এএসপি পলাশ সাহার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল ১০টায় র্যাব-৬ এর কমান্ডিং কর্মকর্তা কমান্ডার শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে লাশবাহী ফ্রিজার গাড়িতে করে নিহত পলাশ সাহার মরদেহ কোটালীপাড়া উপজেলার গ্রামের বাড়ি তাড়াশীতে পৌঁছায়।
পলাশ সাহার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর সাথে সাথে তাকে দেখতে সহপাঠী, প্রতিবেশী ও স্বজনরা ওই বাড়িতে ভিড় করে। এ সময় ওই বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনের কান্নায় ও আহাজারিতে শোকাবহ হয়ে ওঠে সাহা বাড়ির পরিবেশ।
গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট সড়কে কোটালীপাড়ার তাড়াশী বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণপাশে পলাশ সাহার বাড়ি। মেঝে পাকা চারচালা টিনের ঘরের সামনে বসে আর্তনাদ করে স্মৃতিচারণ করছেন বড় বোন রমা সাহা। পাশে মেজো ভাই নন্দলাল সাহা ও বড় ভাই লিটন সাহার স্ত্রী পাশে বসে আর্তনাদ করছিলো।
বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পর শেষকৃত্যের জন্য পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পৌরসভার পারকোনা মহাশ্মশানে। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দুপুরে সেখানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
নিহত পলাশের মেজ ভাই নন্দলাল সাহা তিনি বলেন, তিন ভাই এক বোনের পলাশ ছিলেন সবার ছোট ও আদরের। কোটালীপাড়া থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। সাব-রেজিস্ট্রি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ও ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়। চাকরির জীবনে সে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৭ দায়িত্ব পালন করেন। দুই বছর আগে ফরিদপুর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরীপাড়ার সুস্মিতা সাহার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের ৬/৭ মাস পর থেকেই শুর হয় সংসারে অশান্তি।
নন্দলাল সাহা আরো বলেন, পলাশ চেয়েছিল মা ও স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু তার স্ত্রী এটিকে ভালোভাবে মেনে নিতে পারছিল না। মা বাসায় না থাকতে চাইলে পলাশ কষ্ট পেত। বাসায় থাকলে স্ত্রী মাকে সহ্য করতে পারত না। এ নিয়েই মাঝে মাঝে ঝামেলা লেগে থাকতো। ভাই চলে গেল আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি নিজেই ৩৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যখন পলাশের একের পর এক চাকরি হচ্ছিল তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি চাকরি করব না উদ্যোক্তা হবো। তাই ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু আদরের ছোট ভাই চলে গেল আর সংসারের সবাইকে সাগরে ভাসিয়ে গেল।
যদিও এ বিষয়ে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহার কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।
পলাশ সাহার বাল্যবন্ধু ইকবাল হাসান বলেন, পলাশ সাহা আমার বাল্যবন্ধু ছিল। লেখাপড়ায় আমাদের চেয়ে অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। বন্ধুদের সাথে আন্তরিকতার সাথে মেলামেশা করতো। তার অকাল মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক অসহনীয় বাস্তবতা।
বুধবার (৭ মে) দুপুরে চট্টগ্রামের নগরের চান্দগাঁও র্যাব-৭ ক্যাম্পে অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। এ জন্য নিজের কক্ষে যান পলাশ সাহা। এ সময় সহকর্মীরা গুলির শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তাঁকে। নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পলাশ আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে র্যাব কর্তৃপক্ষ। তার রক্তাক্ত মরদেহের পাশেই পড়ে ছিল একটি চিরকুট। সেখানে তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী বলে উল্লেখ করেন।
ওই চিরকুটে আরো উল্লেখ ছিল, 'আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের উপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।'
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল