মাত্র এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই ডুবে থাকছে বাগেরহাট শহর। কম হোক বা বেশি বৃষ্টি হলেই ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই প্রথম শ্রেণির পৌর শহরটির ২ লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকেনা। শহর জুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বাড়িঘর, পাকা সড়কসহ সব জায়গা পানিতে তলিয়ে যায়। আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি শেষ হলেও দিনভর থেকে যায় এই পানি। জলাবদ্ধতায় বাসাবাড়ি থেকে শহরে বের হওয়ার অবস্থা থাকে না। মঙ্গলবার ভারি বৃষ্টিতে আবারো ডুবে রয়েছে বাগেরহাট শহর।
দিনভর বৃষ্টিতে বাগেরহাট শহরের খানজাহান আলী সড়ক, রেল রোড, সাধনার মোড়, শালতলা, পিটিআই সড়ক, ২৫০ জেলা হাসপাতাল সড়ক, আমলাপাড়া সড়ক, জেলা ডাকঘরের সামনে, মডেল থানা, খারদ্বার, বাসাবাটি, মিঠাপুকুরপাড় মোড়, পৌরসভার সামনে, জাহানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়ক, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পিছনসহ শহরের ৭৫ ভাগ এলাকাই ডুবে রয়েছে। এক ঘন্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে শহরের অলিগলি। শহরের বেশিরভাগ সড়ক থাকছে পানির নিচে। এতে শহরের বাসিন্দাদের সাথে যানবাহন চালকদের পড়তে অকল্পনীয় ভোগান্তিতে।
মঙ্গলবার বিকালে হাটুর উপরে লুঙ্গি তুলে বাগেরহাট মডেল থানায় যেতে দেখা যায়, যাত্রার ইউনিয়নের বাসিন্দা এবাদাদ হোসেন ও তার স্ত্রীকে। তারা বলেন, জেলা সদরের থানায় ঢুকতে যদি হাটু পানি ভেঙ্গে যেতে হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব। শহরের যে সড়কে যাইনা কেন, সব সড়কই বৃষ্টির পানিতে ডুবে রয়েছে। থানার পুলিশ সদস্য মো. সাইদ জানান, মাত্র এক ঘন্টার বৃষ্টি হলেই থানার সামনে পানিতে তলিয়ে যায়। পুরো শহরেরই একই অবস্থা হয়। অনেক দোকানপাটও তলিয়ে যায়। উৎপল দেবনাথ বলেন, বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ি। বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থায় রয়েছি। কি করব, বাড়িঘর বেঁচেতো আর চলে যেতে পারি না। তাই কষ্ট করে থাকছি। আটো চালক সোহেল খান বলেন, শহরের অধিকাংশ সড়কে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকছে, কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও আবার গাড়ির চাকা ডুবে থাকছে। যাত্রী নেই বললেই চলে। মানুষ পানির ভয়ে ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। এতে আয় কম হচ্ছে, পানিতে ভরে থাকায় সড়কের খাদাখন্দকে পড়ে গাড়ি প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। গৃহবধু শাহানা পারভিন বলেন, বাড়ির ভেতরে পানি উঠে গেছে। চুলায় আগুনও জ্বালানো যাচ্ছে না। ছোট ছেলেটা পানিবাহিত সর্দিজ্বরে ভুগছে।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি সুজনের সাধারণ সম্পাদক এস কে হাসিব বলেন, শহরের সড়ক, ড্রেন খাল কোন কিছুই ঠিক নাই। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে মেয়র ও কাউন্সিররা এই শহরকে বসবাসের অযোগ্য করে এখন পালিয়ে রয়েছে। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, আমি খুব অল্প সময় হয়েছে এখানে যোগদান করেছি। বাগেরহাট শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। এর প্রধান কারণ আধুনিক ডেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও সরকারি খাল দখলসহ ময়লা আবর্জনা ফেল ভরাট হয়ে যাওয়া। এছাড়া শহররক্ষা বাঁধে থাকা পানি নিস্কাশনের গেটগুলো সংস্কারের অভাবে প্রায় আচল হয়ে থাকা। আমরা এখন গেটগুলো সচল করার চেষ্টা করছি। বৃষ্টি মৌসুম গেলে খাল ও ড্রেন পরিস্কার করা হবে। এটা করতে পারলে জলাবদ্ধতা নিরসনে হবে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট পৌরসভার প্রশাসক ডা. ফখরুল হাসান জানান, বাগেরহাট শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘ বছরের। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। এখন এই পৌর শহরে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ হলে জনভোগান্তি কমবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ