অর্থনীতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক টানা নিম্নমুখী। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি, নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি- এই সবই বিনিয়োগ স্থবিরতা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির দীর্ঘায়িত প্রভাব, কারখানায় গ্যাসসংকট ও ডলারের তারল্য সংকট।
এরই মধ্যে সাড়ে তিন শরও বেশি ছোট ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান খাতে তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই দ্বিমুখী ধাক্কার মুখে রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়লে খাদের কিনারে চলে যাবে অর্থনীতি।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইনফোড) নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগ পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিনিয়োগকারীরা এখন অত্যন্ত সতর্ক; অনিশ্চয়তার কারণে নতুন বিনিয়োগে কেউই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
মুস্তফা কে মুজেরীর মতে, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দীর্ঘদিন ধরেই সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ কার্যত স্থবির, আর নতুন মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ধারা ধারাবাহিকভাবে নিম্নমুখী, যা শিল্প সম্প্রসারণ ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নেতিবাচক সংকেত দিচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যত দিন দেশে একটি কার্যকর রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, তত দিন বেসরকারি খাতের স্থবিরতা কাটবে না। তার মতে, রাজনৈতিক সংকট আরো গভীর হলে অর্থনীতি বড় ধরনের চাপে পড়বে এবং প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন- সবকিছুতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী : নতুন বিনিয়োগের দুরবস্থা সামষ্টিক সূচকেও স্পষ্ট। জুন প্রান্তিকে বিদেশি নিট ইকুইটি বিনিয়োগ কমেছে ৬২ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬.২৯ শতাংশে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় বেসরকারি খাত সংকুচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এই সংকট আরো গভীর করতে পারে।
কারখানা বন্ধ হচ্ছে, বাড়ছে বেকারত্ব : বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে মোট ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে সাভারে, যেখানে ২১৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, এর মধ্যে ১২২টি স্থায়ীভাবে এবং ৯২টি অস্থায়ীভাবে। প্রায় ৩১ হাজার শ্রমিক এখানে কাজ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছেইন অ্যাপারেলস, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন ও সাফওয়ান আউটারওয়্যারের মতো বড় কারখানাও রয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু সম্প্রতি বিজিএমইএ ভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অধিকার আদায়ের নামে শ্রমিকদের সংগঠিত আন্দোলনের কারণে কখনো কখনো কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। এক অঞ্চলের অসন্তোষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে শিল্পঘন অন্যান্য অঞ্চলে। উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও সাম্প্রতিক উপদেষ্টা পরিষদের ‘মাত্র ২০ জন শ্রমিক মিললেই ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত্ত শিল্পকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার আগে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে দেশের অবস্থান পিছিয়ে যাবে, বিনিয়োগ কমবে এবং রপ্তানি আয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে, যার প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। ফলে দেশে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৬৩ শতাংশে। এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার। গত বছরের একই সময়ে দেশে বেকার ছিল ২৪ লাখ। দেশের বেকারত্ব বাড়ার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকা, আর ব্যাংকঋণের সুদের হার বেশি হওয়ায় দেশের বেকারত্ব বেড়েছে।
আমদানি ও এলসি খাতে চরম মন্দা : বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের অক্টোবরে ৫৬৪ কোটি মার্কিন ডলারের আমদানি এলসি খোলা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১২.১৫ শতাংশ কম। সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার। শুধু এলসি খোলা নয়, আগের এলসির বিপরীতে বিল পরিশোধও ১১.৪৮ শতাংশ কমেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থবছরের শুরুতে রমজান ও উৎসবের চাহিদা মেটাতে প্রচুর আমদানি হয়েছে। সেই চাপটা এখন কম। এখন যেসব পণ্য আমদানি হবে, সেসব বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে ঈদের পর। তাই অক্টোবরে নতুন এলসির চাপ তেমন ছিল না। তার ওপর শীতের আগে এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ায় আমদানির গতি আরো মন্থর হয়ে গেছে।
আমদানি কমার সবচেয়ে বড় কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী নতুন প্রকল্পে হাত দিতে ভয় পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. আখতার হোসেন বলেন, দেশে ডলারের সরবরাহ এখন যথেষ্ট; দামও স্থিতিশীল। তাই এলসি কমার নেপথ্যে ডলার সংকট নয়, বরং চাহিদা ও বিনিয়োগ কমে যাওয়া দায়ী। বাণিজ্য লেনদেনের ওপর কঠোর নজরদারির কারণে আমদানির আড়ালে অর্থপাচার বন্ধ হওয়ার জন্য অক্টোবরে এলসি খোলা কমেছে। আগে যেমন বেশি এলসি খোলা হতো, তেমনি এর পেছনে অর্থপাচারও হতো। আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং করে অর্থপাচার এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে।
প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা : এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৪.৯ শতাংশে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) গত ২৯ সেপ্টেম্বরের পূর্বাভাসে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হার ঠিক করেছে ৫.৫ শতাংশ।
তবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, যদি সরকার সময়োপযোগী সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশে পৌঁছতে পারে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে রাজস্ব আহরণ, ব্যাংক খাত সংস্কার ও বিনিয়োগ পরিবেশে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক ধারা : রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবর মাসে রপ্তানি আদেশ ৩৯ কোটি ডলার কম এসেছে। অক্টোবরে মোট ২২০ কোটি ডলারের অর্ডার এসেছে, সেপ্টেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ২৪৫ কোটি ডলার। অক্টোবরে ঢাকা অঞ্চলের কারখানাগুলোর রপ্তানি আদেশ আগের মাসের চেয়ে কমেছে ১৫ শতাংশ। ইস্যু করা এসব কারখানায় প্রায় ২১০ কোটি ডলারের আদেশ এসেছে, আগের মাসের চেয়ে যা ৩৫ কোটি ডলার কম। অক্টোবরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারখানাগুলোর রপ্তানি আদেশ কমেছে ২৬ শতাংশ। আদেশ এসেছে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের, আগের মাসে যা ছিল ১৪ কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৮.৫ শতাংশে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪.৫ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক শিল্প, যা মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশ অবদান রাখে, তার প্রবৃদ্ধিও কমছে।
বিনিয়োগ স্থবির, পুঁজিবাজার অস্থির : বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বাজার থেকে সরে আসছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক গত এক মাসে ৪২০ পয়েন্ট হারিয়েছে। সর্বশেষ কর্মদিবস গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১২২.৬৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৭০২ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইতে মোট ৩৮৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৩৩.১৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮৩১৩ পয়েন্টে। সিএসইতে সাত কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
সতর্ক করল আইএমএফ : ১৬ দিনের ঢাকা সফর শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বস্তি ও আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহসী নীতি গ্রহণ না করলে সামষ্টিক আর্থিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে।
আইএমএফ আরো পরামর্শ দিয়েছে, মধ্য মেয়াদে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শাসনব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, যুব বেকারত্ব হ্রাস এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য। সংস্থাটির একটি দল ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে গত ২৯ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সফর শেষে ফিরে যায় এবং গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের ওয়েব সাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে।
সমাধানের পথ : বিশ্লেষকরা বলছেন, সময়োচিত পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক অর্জনগুলো হারাতে বসবে, যার মূল্য দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলমান থাকলে বেসরকারি খাতের উন্নতি সম্ভব নয়। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং বেসরকারি খাতের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হবে। আর্থিক খাতের বর্তমান দুরবস্থা বিনিয়োগকে আরো নিরুৎসাহিত করছে। কর্মসংস্থান না হলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে বেসরকারি খাতে গতি ফিরবে না। দুনিয়ার কোনো দেশেই তা হয়নি, বাংলাদেশেও হবে না।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে ক্রেতাদের কাছে জরিমানা দিতে হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ক্রেতারা এখন বাংলাদেশকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ গন্তব্য’ হিসেবে বিবেচনা করে বিকল্প দেশে অর্ডার দিতে শুরু করেছেন। তিনি জানান, গত ছয় মাসে নতুন অর্ডার আসার হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একজন গবেষক বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা শুরুর সঙ্গে পুঁজিপাচার বেড়ে যায়, কারণ দেশীয় বিনিয়োগকারীরা তাঁদের সম্পদ নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে চান।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো অর্থনৈতিক উদ্যোগই সফল হবে না। যদি রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত আলোচনায় না বসে এবং সংঘাতের পথ পরিহার না করে, তাহলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। নির্বাচনের আগে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি কেউ নিচ্ছে না।
ট্রেজারি কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে বড় গ্রুপগুলো আবার নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ শুরু করবে। এতে এলসি খোলা বাড়বে ও আমদানির গতি ফিরবে। তাঁদের মতে, নির্বাচন শেষে নীতিগত দিকনির্দেশনা পরিষ্কার হলে অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
এদিকে ব্যাংক খাতে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে ব্যাংকঋণের সুদের হার ব্যবসাবান্ধব করার দাবি তোলা হয়।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) মহাসচিব আলমগীর হোসেন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে সুদের হার ১৪ শতাংশের ওপরে। পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) খাতের ব্যবসায়ীরা মুনাফাই করেন ১০ থেকে ১১ শতাংশ। ব্যাংকঋণের বর্তমান সুদহার কোনো অবস্থায়ই ব্যবসাবান্ধব নয়। উচ্চ সুদহারে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি ফজলে শামীম এহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ নেই। ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে গেছে।
সৌজন্যে- কালের কণ্ঠ।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ