শিরোনাম
শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সন্তানের প্রতি মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য

মুফতি রফিকুল ইসলাম মাদানি

সন্তানের প্রতি মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য

আজকের শিশু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কর্ণধার। মানব-সভ্যতার ধারক-বাহক। প্রতিটি সুসন্তান মা-বাবার আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। সুসন্তানের মাধ্যমে মানুষ মৃত্যুর পরও অমর হয়ে থাকে। তাই সন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দর ও সফল হওয়ার জন্য মা-বাবাকে অবশ্যই নিবেদিত হতে হবে। সব সময় সচেতন থাকতে হবে সন্তান যেন কোনোভাবেই বিপথগামী না হয়। এ বিষয়ে ইসলামী দিকনির্দেশনা কালজয়ী পাথেয়। আল কোরআনে সন্তানকে সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘ধন-ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্তানাদি পার্থিব জীবনের শোভা এবং স্থায়ী সৎকর্ম আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্য উত্তম।’ সুরা কাহফ আয়াত ৪৬। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষ মরে গেলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল তখনো চালু থাকে। সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যা থেকে লাভবান হওয়া যায় এবং সুসন্তান যে তার (মা-বাবার) জন্য দোয়া করে।’ মুসলিম। সন্তানকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তার যাবতীয় অধিকার ইসলামের আলোকে তাকে প্রদান করতে হবে। সুশিক্ষিত, আদর্শ চরিত্রবান ও শ্রেষ্ঠ নাগরিক হওয়ার জন্য তাকে যেমন স্বাধীনতা ও সহযোগিতা করা মা-বাবার দায়িত্ব তেমনিভাবে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের অভাবে সন্তান যেন তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যবস্তু অবলম্বন করতে ভুল না করে তা লক্ষ্য রাখাও মা-বাবার জন্য জরুরি। সুসন্তান লাভের জন্য, সন্তানের ভবিষ্যৎ শান্তিময় হওয়ার জন্য, তাদের চোখ জুড়ানো কর্মফল ও হৃদয় নিংড়ানো আচরণে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার জন্য প্রথমেই আদর্শ মা নির্বাচন করতে হবে। মা ভালো না হলে তার সন্তান ভালো হওয়ার আশা করা যাবে না। মা-বাবাই সন্তানের প্রথম শিক্ষক। আদর্শ পথপ্রদর্শক। সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাবার কর্তব্য সন্তানের কানে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সপ্তম দিনে আকিকা করা, উত্তম নাম রাখা, মাথার চুল মু-ন করা, সন্তানকে আদর্শ পরিবেশে লালনপালন করা। আদর সোহাগে ছেলেমেয়ে হিসেবে কোনো ব্যবধান না করা ইত্যাদি মা-বাবার কর্তব্য। তবে সন্তানকে ইসলামী জ্ঞান, সুশিক্ষা ও সৎ চরিত্র শিক্ষা দিয়ে আদর্শ মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা মা-বাবার একটি মহান দায়িত্ব। সন্তানকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার পাশাপাশি সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও আদর্শ চরিত্রবান হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অন্যায়, মিথ্যাচার, মদ, নেশা ও বিবাহবহির্ভূত যৌনাচারে সন্তান যেন লিপ্ত না হতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করাও মা-বাবার দায়িত্ব। মহান প্রভু ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদার লোকেরা! তোমরা তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাও।’ সুরা তাহরিম আয়াত ৬। মহানবী (সা.) বলেন, ‘সৎ শিক্ষার চেয়ে উত্তম কোনো কিছুই কোনো মা-বাবা তার সন্তানের জন্য রেখে যায় না।’ তিরমিজি। আল্লাহ কোরআনে কারিমে হজরত লোকমান (আ.) তাঁর সন্তানকে উপদেশ করার ঐতিহাসিক ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন; যা আমাদের জন্য অবিস্মরণীয় ও শিক্ষণীয়। হজরত লোকমান (আ.) তাঁর ছেলেকে আল্লাহর সঙ্গে শিরক পরিহার, একাত্মবাদের বিশ্বাস স্থাপন, নামাজ কায়েম, ভালো কাজের আদেশ, পাপাচার ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, অহংকার-গৌরব না করা এবং সংযত হওয়া ও মধ্যনীতি অবলম্বন করার প্রতি উপদেশ প্রদান করেন। সুরা লোকমান।

লেখক : কলামিস্ট, গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর