সোমবার, ৩১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শৈলজারঞ্জন মজুমদার ও একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

সাজ্জাদুল হাসান

শৈলজারঞ্জন মজুমদার ও একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

শৈলজারঞ্জন মজুমদার ১৯০০ সালের ১৯ জুলাই নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার বাহাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৪ মে ১৯৯২ সালে সল্টলেক, কলকাতায় পরলোকগমন করেন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক এবং স্বরলিপিকার। বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রসংগীতের সুর ও বাণীর পরিশুদ্ধ রূপ প্রচার ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে  তাকে বলা হয় ‘রবীন্দ্রসংগীতাচার্য’। মোহনগঞ্জ আমার জন্মস্থান। তাই আমার মতো মোহনগঞ্জ তথা নেত্রকোনাবাসীর জন্য বিষয়টা অত্যন্ত গর্বের এবং আনন্দের।

কর্মজীবনের পুরোটা সময় তিনি কাটিয়েছেন শান্তিনিকেতন এবং কলকাতায়। কিন্তু তার জন্মস্থান কংস নদীর তীরে, হাওরের পাড়ে, মোহনগঞ্জের বাহামে। শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে বাহাম এবং আইনজীবী পিতার কর্মস্থল নেত্রকোনায়। এ ছাড়া জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার টানে তিনি ১৯৭৫, ১৯৭৬ এবং ১৯৮৬ সালে নেত্রকোনায় এসেছেন। শুধু তাই নয়, গ্রীষ্মের ছুটিতে কলকাতা থেকে নেত্রকোনায় এসে স্থানীয় শিল্পীদের রবীন্দ্রনাথের গান এবং কবিতা আবৃত্তি শেখাতেন। এরই ধারাবাহিকতায় শান্তিনিকেতনের বাইরে তিনিই প্রথম ১৯৩২ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করেন। নেত্রকোনার দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেই দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেই তিনি এ জন্মোৎসবের আয়োজন করেন। এ প্রসঙ্গে শৈলজারঞ্জন নিজেই বলেছেন, সমগ্র বাংলাদেশে এর আগে রবীন্দ্রজয়ন্তীর কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। শান্তিনিকেতনের বাইরে নেত্রকোনায় জন্মজয়ন্তী উদযাপনে রবীন্দ্রনাথ খুব খুশি হয়েছিলেন। উত্তর ভারতের শৈলাবাস থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ শৈলজারঞ্জনকে চিঠি লিখে পাঠালেন।

কল্যাণীয়েষু,

তোমাদের নেত্রকোনায় আমার জন্মদিনের উৎসব যেমন পরিপূর্ণ মাত্রায় সম্পন্ন হয়েছে এমন আর কোথাও হয়নি। পুরীতে একবার আমাকে প্রত্যক্ষ সভায় নিয়ে সম্মান করা হয়েছিল। কিন্তু নেত্রকোনায় আমার সৃষ্টির মধ্যে অপ্রত্যক্ষ আমাকে রূপ দিয়ে আমার স্মৃতির যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, কবির পক্ষে সেই অভিনন্দন আরও অনেক বেশি সত্য। তুমি না থাকলে এই উপকরণ সংগ্রহ করত কে? এই উপলক্ষে বৎসরে বৎসরে তুমি আমার গানের অর্ঘ্য পৌঁছিয়ে দিচ্ছ তোমাদের পল্লীমন্দিরের ভোগমন্ডপে-এও কম কাজ হচ্ছে না।

আমার জন্মদিন প্রতিবৎসর তোমাদের কাছে নিয়ে যাচ্ছে উৎসব আমাকে এনে দিচ্ছে ক্লান্তির ডালিতে নতুন বোঝা। এবার পাহাড়ে এখনো দেহমনে অবসাদ আসক্ত হয়ে আছে। পৃথিবীজুড়ে যে শনির সম্মার্জনী চলেছে-বোধ হচ্ছে তার আঘাত এসে পড়বে আমার ভাগ্যে। দেখা হলে নৃত্যকলা সম্বন্ধে মোকাবিলায় তোমার সঙ্গে আলাপ করব।

ইতি

তোমাদের

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২৫.৫.৩৯

এই চিঠিই বলে দিচ্ছে, শৈলজারঞ্জন মজুমদার রবীন্দ্রনাথের কতোটা প্রিয় ছিলেন। এমন গুণী মানুষকে জন্ম দিয়ে ধন্য হয়েছে বাহাম গ্রামের মাটি। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সুশীল সমাজের কাছে শৈলজারঞ্জন মজুমদারের নাম যতটা পরিচিত আমার মতো অনেক পাঠক বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি এত পরিচিত নন বলেই আমার ধারণা। আমি খুব গর্বিত উনার মতো একজন মানুষ আমার মোহনগঞ্জে জন্মেছেন। তাই, আমাদের এ প্রজন্মের সন্তানেরা তাদের পূর্বপুরুষের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করুক-এরকম একটা দায় থেকে উনাকে নিয়ে লিখছি।

১৯৭৫ সালে তিনি যখন নিজ জন্মভূমি বাহাম গ্রামে আসেন তখন আমার পিতা মরহুম ডাক্তার আখলাকুল হোসাইন আহমেদের সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জন্মভূমি বাহাম যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই আমার পিতার সঙ্গে দেখা এবং সেই থেকে সখ্য। আব্বা এবং উনি একসঙ্গে জন্মভূমি বাহামে গেলেন। বাহাম গ্রামে পৌঁছলে সেখানে গ্রামের ছেলেরা যখন তাকে গলায় ফুল দিতে যাচ্ছিল তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কপালে আগে জন্মভূমির মাটি ঘষে দাও’। এর পর নিজ হাতে জন্মভূমির মাটি নিয়ে কপালে মেখেছিলেন। যাত্রাপথের গান বইয়ে তিনি লিখেন, ‘এভাবেই আনন্দ ও বেদনায় উদ্বেল হয়ে আমি আমার দেশের মাটিকে প্রণাম জানালাম।’ এখানেই জন্মভূমির মাটি, বৃক্ষ, তরুলতার প্রতি তার অসীম দরদ ও মমতার চিত্রই ফুটে উঠেছে। ফিরে আসার পথে আমার পিতা উনাকে আমাদের বাসা ‘ছায়ানীড়ে’ থাকার অনুরোধ করেন। আব্বার অনুরোধেই সে যাত্রায় একদিন আমাদের বাসায় থেকে গেলেন। ‘উদীচী’ এবং ‘স্পন্দন’ শিল্পীগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বাড়ির উঠানে অনুষ্ঠান করে তাকে সংবর্ধিত করা হয়। ‘যাত্রাপথের আনন্দগান’ পুস্তকে তিনি আমার আব্বা এবং আম্মার আতিথেয়তার কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, ‘মোহনগঞ্জে আমরা যে বাড়িতে ছিলাম সেই বাড়ির গৃহস্বামী ডা. আখলাকুল হোসাইন আহমেদ সস্ত্রীক যেভাবে আদর-আপ্যায়ন করেছেন তাহা কোনো দিন ভুলতে পারবো না।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম ¯ন্ডেœহ ও আন্তরিকতায় ২০১৮ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে আমি সপরিবারে শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আশ্চর্য শান্তির সেই আশ্রমে আমি এবং আমার স্ত্রী লায়লা আরজুমান রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি এবং মহত্বকেই খুঁজে দেখছিলাম। সত্যি সত্যি শান্তিনিকেতনের রং এবং প্রকৃতি মনকে শান্তি দিয়েছিল খুব। সেখানে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করে মুক্ত হাওয়ায়, পুরনো গাছের তলায়। মূলত পাঁচটি বাড়ি নিয়ে উত্তরায়ণ। ঘুরে ঘুরে সেই বাড়িগুলো দেখছিলাম। শান্তিনিকেতনকে বুঝতে হলে হেঁটে ঘুরলেই ভালো হয়। সত্যি বলতে কি, শান্তিনিকেতনের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেদিন খুব গর্বিত হয়েছিলাম। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে, ঠাকুর পরিবারের অনেকের সঙ্গেই ছবিতে শৈলজাকে দেখেছি। আমার নিজের মাটির সন্তানকে, অগ্রজকে অনেক উচ্চতায় দেখে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়েছি। শান্তিনিকেতনের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সবুজকলি সেনের সঙ্গেও তাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল। অধ্যাপক সবুজকলি সেন বলছিলেন কেন তিনি রবীন্দ্রসংগীতাচার্য; কেন রবীন্দ্রনাথ তাকে এতটা পছন্দ করতেন। আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টায় সংগীত ভবনের সামনে দাঁড়ালাম। এই সংগীত ভবনের অধ্যক্ষের দায়িত্বেই ছিলেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার। কয়েকজন শিক্ষার্থী দেখে মনে হলো, এরকম হাজারো শিক্ষার্থীর কণ্ঠে-হৃদয়ে-মননে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন রবীন্দ্রসংগীতের আলো। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেক বিখ্যাত শিক্ষার্থী রয়েছে তার।

তরুণ সাংবাদিক মুহম্মদ আকবর ‘শৈলজারঞ্জন মজুমদার স্মারকগ্রন্থ’ সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন। সেখানে বাংলাদেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী এবং পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক জগতের ব্যক্তিবর্গ শৈলজারঞ্জনের কর্মজীবন নিয়ে মূল্যায়নধর্মী প্রবন্ধ লিখেছেন। লেখাগুলো পড়লেই বুঝতে পারি উভয় দেশেই তিনি কতটা শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। ক্ষুদ্র পরিসরে সবার লেখা উদ্ধৃত করা হয়তো সম্ভব হবে না। শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে অনুধাবন করার স্বার্থে সেই সংকলন গ্রন্থ থেকে কিছু কথা পাঠকের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছি। ভাষাসৈনিক ও রবীন্দ্র গবেষক আহমেদ রফিক লিখেছেন- ‘পিতার ইচ্ছানুযায়ী ওকালতির জোয়াল কাঁধে নিয়ে সাদামাটা গার্হস্থ্য জীবনে জড়িয়ে পড়তে চাননি শৈলজারঞ্জন মজুমদার। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহ্বানে শান্তিনিকেতনে শিক্ষক পদে যোগ দেওয়ার প্রবল ইচ্ছায় ব্যক্তিত্বশালী পিতার ইচ্ছা ও ক্রোধ দুই-ই অতিক্রম করতে পেরেছিলেন শৈলজারঞ্জন। তিনি এ প্রবন্ধেই লিখেছেন- ‘দেশ বিভাগ বাঙালি জাতিসত্তাকে বিভাজিত করেছে, কিন্তু মনটাকে দ্বিখন্ডিত করতে পারেনি, অবশ্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে। শৈলজারঞ্জনও তাই জন্মভূমিতে এসে আবেগে আপ্লুত হন।’

প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ, সংগঠক এবং শৈলজারঞ্জনের ¯ন্ডেœহধন্য ওয়াহিদুল হক বলেন ‘রবীন্দ্রসংগীত-চর্চায় ঞধমড়ৎব’ং ৎবধষ ংড়হম-এর সমাজে বেঁচে থাকার ব্যাপারে শৈলজারঞ্জন অপরিহার্য নাম, বোধ করি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নাম’।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী এবং শৈলজারঞ্জনের ছাত্রী সন্জিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা যারা শৈলজারঞ্জনের রবীন্দ্র-উপলব্ধির ছিটেফোঁটা প্রসাদ পেয়েছি, তারা যদি তার ধ্যানকে অবলম্বন করে রবীন্দ্রসংগীত আয়ত্ত করার চেষ্টা করি তবে অর্থবহ হবে এই শতবর্ষের গুরুপ্রণামি। রবীন্দ্রনাথ তাকে ‘গীতাম্বুধি’ উপাধি দিয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞতা তার বড় প্রিয় ছিল। এই মানেই তাকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই।’

শৈলজারঞ্জনের সংগীতচর্চা এবং জীবনাদর্শ সম্পর্কে তার ছাত্রী কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় শৈলজদা সম্পর্কে লেখা আমার পক্ষে কঠিন। কেননা তার কথা ভাবতে বা লিখতে গেলে চিন্তাভাবনা, আবেগ-অনুভূতি এত তাড়া করে আসে যে কী লিখব কী লিখব না তা স্থির করতে পারি না। একেবারে ছেলেবেলা থেকেই বলতে গেলে জ্ঞান হবার পর থেকেই তাকে দেখেছি আমাদের পরিবারের একজন হিসেবে। নিজের বাবা থেকে তাকে কখনো আলাদা ভাবতে হয়নি, ভাবতে শিখিনি। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে নতুন নতুন যে গানই শিখে আসতেন তা আমাদের কণ্ঠে তুলে দিতেন। আজ শিল্পী হিসেবে যতটুকু স্বীকৃতি পাচ্ছি তার মূলে আছে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদ এবং শৈলজারঞ্জন মজুমদারের প্রেরণা ও পরিচালনা। এ কথা আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’

তার কর্ম ও প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘দেশীকোত্তম’ উপাধি এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লিটারেচার’ উপাধি প্রদান করা হয়। শৈলজারঞ্জন মজুমদারের জন্মদিনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে নিয়ে কবিতায় বলেছেন-

‘জন্মদিন এলো তবে আজি

ভরি লয়ে সংগীতের সাজি।

বিজ্ঞানের রসায়ন রাগরাগিণীর রসায়নে

পূর্ণ হলো তোমার জীবনে।

কর্মের ধারায় তব রসের প্রবাহ যেথা মেশে,

সেইখানে ভারতীর আশীর্বাদ অমৃত বরষে’।

আনন্দের বিষয় রবীন্দ্রনাথের একান্ত প্রাণের স্বজন, ‘রবীন্দ্রসংগীতাচার্য’ শৈলজারঞ্জন মজুমদারের স্মৃতি, রবীন্দ্রসংগীত চর্চা ও গবেষণার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে ২.২০ একর জায়গা নিয়ে আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে’র প্রকল্প গ্রহণ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ২ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে এ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ। এ প্রকল্পে রয়েছে তিন তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, অডিটরিয়াম ভবন, ওপেন এম্ফিথিয়েটার, গ্রন্থাগার জাদুঘর, সবুজ চত্বর ও পুকুর সম্বলিত একটি অত্যাধুনিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এ ছাড়াও একাডেমিক প্রাঙ্গণে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত গবষধ করড়ংশ রয়েছে। শৈলজারঞ্জনের স্মৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পুনরুজ্জীবিত হবে বাংলাদেশ তথা হাওর বাংলার ভাটির সংস্কৃতি। এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মাধ্যমে শান্তিনিকেতনের সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীত চর্চা ও গবেষণার একটা সেতু স্থাপিত হবে। একটি সচেতন সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্য ও তৎপরতা থেকে নির্মিত হয়েছে ‘শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিল্প-সাহিত্য-সংগীতে সংগীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের অবদান বিশেষ করে রবীন্দ্র সংগীতের সুরকার, স্বরলিপিকার হিসেবে তার অবদান দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা; দেশে রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার, প্রশিক্ষণ ও নতুন নতুন সংগীতশিল্পী সৃষ্টিতে অবদান, এ ছাড়া নেত্রকোনা জেলার তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রাচীন শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা, সংরক্ষণ এবং উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হবে।

সার্বিকভাবে, রবীন্দ্রসংগীত চর্চা ও লোক সংস্কৃতিসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক চর্চা ও সমৃদ্ধিতে এ প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

মোহনগঞ্জের একজন সন্তান হিসেবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এ মহৎ মানুষের স্মৃতি ও কর্মকে ধরে রাখার জন্য ‘শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ নির্মাণে অনেকের সঙ্গে সামান্য ভূমিকা রাখতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। যখনই মোহনগঞ্জে যাই শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাজের অগ্রগতি দেখার জন্য বাহাম গ্রামে চলে যাই। তখন মনটা আনন্দে ভরে যায়। দেশ-বিদেশ থেকে শিল্পী, গবেষক ও পর্যটকরা এসে এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক আয়োজনে মিলিত হবে, গবেষণা করবে, শৈলজারঞ্জন মজুমদার সম্পর্কে জানবে- বিষয়টা ভেবে এ জনপদের একজন হিসেবে আমি খুব গর্ব অনুভব করি। রবীন্দ্রসংগীত চর্চা, শৈলজারঞ্জন এবং ভাটি বাংলার সাংস্কৃতিক পরিচর্যার এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।  সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়সহ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে  জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।

লেখক : সাবেক সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও চেয়ারম্যান, বিমান পরিচালনা পর্ষদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

সর্বশেষ খবর