বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

তোফায়েল আহমেদের দীর্ঘশ্বাস ও স্থানীয় সরকার

আলী নেওয়াজ খৈয়ম

তোফায়েল আহমেদের দীর্ঘশ্বাস ও স্থানীয় সরকার

২৯ জুন জাতীয় সংসদে বরেণ্য রাজনীতিবিদ আমাদের সবার শ্রদ্ধাভাজন তোফায়েল আহমেদের বক্তৃতা শুনছিলাম। তিনি দেশে আমলাতন্ত্রের কাছে জনপ্রতিনিধিদের হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার কারণ বা সরকার পরিচালনায় আমলা প্রাধান্যের বিষয়ে তাঁর হতাশা প্রকাশ করে দীর্ঘ বক্তৃতা করছিলেন। নানান কথার ভাঁজে তাঁর সার কথা হলো ‘রাজনীতিকদের কর্তৃত্ব ম্লান হয়ে যাচ্ছে’। কাজী ফিরোজ রশীদসহ আরও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য একই সুরে কথা বলেছেন। ফিরোজ রশীদ তো আরও একটু খোলাসা করে বলেছেন, ‘দেশে রাজনীতি নেই, দেশ চালাচ্ছে আমলা আর জগৎশেঠরা’।

জাতীয় সংসদের সদস্যসহ আমাদের দেশের কোনো স্তরের জনপ্রতিনিধিরই এখন কোনো মূল্য নেই। সংসদে দাঁড়িয়ে যখন সংসদ সদস্যরা তাঁদের মানসম্মান নিয়ে চিৎকার করেন তখন বুঝতে আর কষ্ট হয় না দেশে আমলাতন্ত্র কীভাবে জেঁকে বসেছে। রাষ্ট্র যখন জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব হারায় তখন জনপ্রতিনিধিরা কোনো বিষয়ে আর নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে পারেন না। তাদের ক্রমাগত পরগাছার মতো জীবনযাপন করতে হয়। রাজনীতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষ যাঁরা মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ১৯৪৭-পরবর্তী সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের এমন দীর্ঘশ্বাসের রোদন দেশের আগামী অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা যে আজ ভেঙে পড়েছে তা বুঝতে কারও আর বাকি নেই। সমাজের সর্বস্তরে আজ প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্বের নিঃসরণ প্রক্রিয়া আমাদের জাতির মেরুদন্ডকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। সমাজের সর্বস্তরে তা এমনভাবে প্রোথিত যা ভাবা যায় না। স্কুল পরিচালনা কমিটির মতো স্তর থেকে সর্বোচ্চ সংস্থা জাতীয় সংসদের এ স্খলন আমাদের যে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে তা বোধকরি তোফায়েল আহমেদ বা কাজী ফিরোজ রশীদের মতো বোদ্ধা রাজনীতিক ছাড়াও সব সচেতন মানুষ অনুভব করতে পারেন। কিন্তু কেন যে তাঁদের কিছুই করার নেই তা আমার বোধগম্য নয়। একেই হয়তো নানান অজুহাতে কমপ্রোমাইজ করে চলা বলে। কিন্তু তাতে সর্বনাশ হয়ে যায় দেশের ও গণতন্ত্রের। রাজনৈতিক দল, স্থানীয় সরকার বা স্থানীয় সংস্থাসমূহ ছাড়া যে গণতন্ত্র কোনোভাবেই হয় না এ কথা কে না জানে?

সবকিছু আলোচনা এ পর্যায়ে না করি; এ সামগ্রিক পরিস্থিতির মধ্যে আমার পর্যবেক্ষণের বিষয় হলো বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারের বর্তমান পরিস্থিতি। আমার ভাইয়ের এক বন্ধু মারা গেলে তাঁর জানাজায় গেলাম, অনেক মানুষ হয়েছে। জানাজা শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান জোর করেই আমাকে তাঁর অফিসে নিয়ে গেলেন। সজ্জন মানুষ, বহুদিন পরে তাঁর অফিসে যাওয়া। সম্ভবমতো তিনি আমাকে আপ্যায়ন করলেন। দেশের রাজনীতি, স্থানীয় সরকারের অবস্থা, এলাকার নানা সমস্যা নিয়ে আমাদের অনেক কথা হলো। মোটামুটি পরিপাটি অফিস। তবে বোঝা যায় সাধারণ নাগরিকদের এখানে আসা-যাওয়া আছে। ঘরজুড়ে সে ছাপ লক্ষ্য করা গেল। আমাদের কথা শেষ হলে চেয়ারম্যান আমার হাত ধরে তাঁর পাশের রুমে নিয়ে গেলেন। হাতটা ধরেই তিনি আমাকে খুব ছোট্ট করে কানে কানে বললেন, চলেন স্থানীয় সরকার দেখাই।

পাশের রুমটা ইউএনও সাহেবের। তাঁর রুমে ঢুকে আমার সঙ্গে তিনি ইউএনওকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি সাবেক এমপি শুনে অগত্যা ইউএনও তাঁর আলস্য ভেঙে কোনোমতে উঠে দাঁড়ালেন। সামান্যই কুশল বিনিময় হলো, দারুণ তাঁর অফিস, ঝকঝকে তকতকে। আধুনিক ইনটেরিয়রে সাজানো রুম। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। চেয়ারম্যানের রুমের সাজসজ্জা এর কাছে কিছুই না। খানদানি আমলার রুম বটে। আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে তাদের অফিসরুমের এমন পার্থক্য দেখে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের করুণ অবস্থার কথা ভাবছিলাম। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়। এটাই নাকি সমগ্র বাংলাদেশের উপজেলাসমূহের সাধারণ চিত্র।

আমাদের সংবিধানে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য স্থানীয় সরকারকে প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান এবং একই সঙ্গে জনগণের অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে স্থানীয় সরকার সম্পর্কে চারটি অনুচ্ছেদ ছিল।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণের বিষয় বাতিল করে সেখানে ভিন্ন বিষয় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ওই ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা ছিল-  ‘রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিগণ সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎসাহ দান করিবেন এবং এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহে কৃষক, শ্রমিক এবং মহিলাদিগকে যথাসম্ভব বিশেষ প্রতিনিধিত্ব দেওয়া হইবে’।

১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে, এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে’।

৫৯(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে’।

৫৯(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই সংবিধান ও অন্য কোনো আইন-সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা যেইরূপ নির্দিষ্ট করিবেন, এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় উল্লিখিত অনুরূপ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান যথোপযুক্ত প্রশাসনিক একাংশের মধ্যে সেইরূপ দায়িত্ব পালন করিবেন এবং অনুরূপ আইনে নিম্নলিখিত বিষয়-সংক্রান্ত দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত হইতে পারিবে;

(ক) প্রশাসন ও সরকারি কর্মচারীদের কার্য

(খ) জনশৃঙ্খলা রক্ষা

(গ) জনসাধারণের কার্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন-সম্পর্কিত পরিকল্পনা-প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন’।

৬০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘এই সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের বিধানাবলিকে পূর্ণ কার্যকরতাদানের উদ্দেশ্যে সংসদ আইনের দ্বারা উক্ত অনুচ্ছেদে উল্লিখিত স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্থানীয় প্রয়োজনে কর আরোপ করিবার ক্ষমতাসহ বাজেট প্রস্তুতকরণ ও নিজস্ব তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা প্রদান করিবেন’।

সংবিধানে উল্লিখিত এ বিপুল ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও বাস্তবতা হলো জনগণের প্রত্যক্ষ শাসনের প্রশ্নে সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদকে কেউই আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করছেন না। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবিধানে বর্ণিত আইনকে মানা হচ্ছে না। সময়ে-সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত সার্কুলার, প্রজ্ঞাপনে জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার গণতান্ত্রিক পন্থাকে রুদ্ধ করা হয়েছে। ক্রমাগত আমলানির্ভর করে তোলা হচ্ছে। দেশে এখন প্রকৃত অর্থে জনপ্রধিনিধিদের কোনো মর্যাদা নেই, নেই কোনো গুরুত্ব বা কার্যক্রম, যা আছে তা আমলাতন্ত্র আর নানা বিধিবিধানে জর্জরিত এক অকার্যকর কাঠামো, জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্র বা কোনো সংস্থা নয়।

আমাদের দেশ মোট পাঁচটি প্রশাসনিক স্তরে পরিচালিত হচ্ছে। কেন্দ্র, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, (সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ)।                                                                                                                                                                এর মধ্যে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ এবং শহরে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে স্থানীয় সরকার বলে গণ্য করা হয়। কেন্দ্র ও বিভাগ সরাসরি সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার্সে সরকারের একজন উচ্চপদের আমলা নিয়োজিত থাকেন।

কিন্তু জেলা ও উপজেলায় দ্বৈতশাসন রয়েছে। জেলায় জেলা প্রশাসকের নিজস্ব দফতর রয়েছে। সুদূর অতীত থেকে আমলা নিয়ন্ত্রিত এ ব্যবস্থা গোটা এলাকার সব কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করে। তার দাপট রাজস্ব আদায় ও ম্যাজিস্ট্রেসির গন্ডি পেরিয়ে এক দুর্দান্ত শক্তিধর আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। ১৯৪৭ ও পরবর্তী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এ যাবৎ এ প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অধীনে আনা সম্ভব হয়নি। অথচ সংবিধানে সব প্রশাসনিক স্তরকে ও তাদের কার্যাবলিকে আইন দ্বারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির অধীন করা হয়েছে।

দেশে মোট ৬৪টি জেলা পরিষদ আছে। এ পরিষদে পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান ও কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। প্রকৃত অর্থে জেলা পরিষদের কোনো প্রশাসনিক কাজ নেই। অতিপ্রাচীন এ সংস্থা তার কিছু পুকুর, কয়েকটি রাস্তাসহ কিছু স্থাপনা দেখাশোনা করে, এর সঙ্গে সরকারের সামান্য কিছু থোক বরাদ্দ দিয়ে কিছু সংস্কারমূলক কাজ করে। আসলে এ সংস্থার কোনো কার্যকারিতা নেই। এটা কোনো প্রশাসনিক ইউনিট নয়। এ সংস্থা থাকা না থাকা একই কথা। উপজেলার চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশন মাঝেমধ্যেই তাদের দাবি-দাওয়া উত্থাপন করে হতাশা প্রকাশ করে। কে শোনে কার কথা। কিছুদিন আগে তারা তাদের ক্ষমতা ও মানসম্মান ফিরে পাওয়ার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। সেই আকুল আবেদন এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। উপজেলার মূল ম্যানুয়াল অনুযায়ী ১৭টি সরকারি ডিপার্টমেন্ট উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। অথচ এখন উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে কোনো নথি আসে না। ইউএনও নিজেই সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন। একজন জনপ্রতিনিধির ঠিক পাশের কামরায় বসে ইউএনও কি দোর্দন্ড প্রতাপে থাকেন, চেয়ারম্যানকে বা পরিষদকে থোড়াই কেয়ার করেন তা বিস্ময়কর! বোঝা যায় পরিষদ ম্যানুয়ালে যা-ই থাকুক না কেন সারা দেশে জনপ্রতিনিধিদের কোনো মূল্য নেই, গুরুত্ব নেই, সম্মান নেই।

ইউনিয়নগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। এখানে দ্বৈতশাসন না থাকলেও এদের আসলে কোনো ক্ষমতাই নেই। এদের ওপরে অবিরত ছড়ি ঘোরায় সবাই। জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসক, ইউএনও, থানার ওসি সবাই তাদের ওপরে তদারকি করে। ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা আর প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে তারা সারা দিন উপজেলা অফিসে ধরনা দিয়ে নিজেদের মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে তুলেছেন। সুপ্রাচীন এ প্রতিষ্ঠানটির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন আজও হয়নি, ফলে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানরা সারা দিন ইউএনও, ওসির মনোরঞ্জনে ব্যস্ত থাকেন। এ ছাড়া তাদের আর উপায় থাকে না।

মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষা জনগণের শাসনের কথা এখন স্বপ্নাতীত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোথাও কোনো জনপ্রতিনিধির শাসন নেই, মানসম্মান নেই, তবু চলছে সব। এ অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ও গুণগত উন্নয়ন নিয়ে এ যাবৎ কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। তাই দিনে দিনে মানুষের কাছে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে উঠেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় সরকারের মতো অপরিহার্য ও সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা ক্রমাগত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা যোগ্য নন, কোনো কাজ বা কোনো কিছু পরিচালনা করা বা কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজনীতিজ্ঞরা পারদর্শী নন, এমন অজুহাতে প্রশিক্ষিত আমলাদের দিয়ে যাবতীয় কাজ করানো হচ্ছে, গড়ে উঠেছে এক দুর্দান্ত আমলানির্ভর সমাজ। আমলাদের যোগ্যতা নিয়ে আমার কোনো বিভ্রান্তি নেই। তারা নিশ্চয়ই নানাভাবে যোগ্য, তাই বলে রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধিদের জন্য নির্ধারিত কর্মপরিসীমায় আমলাদের ঢুকিয়ে কী ফল পাওয়া যায়, তা অতিসম্প্রতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প, দরিদ্রদের জন্য বাড়ি নির্মাণে যে তুলকালাম দুর্নীতি হয়েছে তা দেখলেই বোঝা যায়। উপজেলা চেয়ারম্যানদের পাশ কাটিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইউএনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

যোগ্যতা সংকট যে নেই তা নয়। এসবই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, যদি দেশের সব স্থানীয় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে মনোযোগ থাকে। ঠিক যেন একটি শিশুকে যেমন যত্ন করে তার মা লালনপালনের মধ্য দিয়ে বড় করে তোলেন, তেমনি স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানকেও একইভাবে গড়ে তুলতে হয়। তা না করে অব্যাহতভাবে এ প্রতিষ্ঠানকে নিজ দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে এ প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান ধুলোয় লুণ্ঠিত করা হয়েছে, লুণ্ঠিত করা হয়েছে গণতন্ত্রের মহিমা।

এমন করোনা মহামারীতেও এ প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না। দেশটা মগের মুল্লুক হয়ে গেল। গণতন্ত্রের মৌলবাণী- জনগণ কর্তৃক, জনগণের জন্য, জনগণের শাসন আজ সাধুবাক্যে ব্যবহৃত একগুচ্ছ তামাশার শব্দে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন হলো, আমরা চলেছি কোথায়? দীর্ঘশ্বাস দিয়ে তো আর সমাধান হবে না, প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর