বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতু উজ্জ্বলতম ‘আইকনিক স্থাপনা’

মুহাম্মদ ফারুক খান, এমপি

পদ্মা সেতু উজ্জ্বলতম ‘আইকনিক স্থাপনা’

‘জনগণের সম্পদ লুট নয়, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জনগণ যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে তা পালনে সর্বদা সচেষ্ট আমাদের প্রিয় নেতা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধেয় ও সংগ্রামী সভানেত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।’ পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু। এ সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন ও আশা পূরণ হচ্ছে। পদ্মা ঘোচাবে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট, আনবে আর্থিক সচ্ছলতা ও কর্মসংস্থান। সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর ফলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে শুরু করে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত এ সড়ক ও রেলসেতু দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে যুক্ত করছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের এ সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে। মাঝে বহু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। ছোট-বড় ইঞ্জিনিয়ারিং বাধা এসেছে পদে পদে। বারবার চেষ্টা হয়েছে কাজ থামিয়ে দেওয়ার। করোনার প্রকোপে যখন থেমে গেছে গোটা বিশ্ব, তখনো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফলেই পুরোদমে নির্মাণকাজ চলেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা গুজব ছড়িয়েছে মাঝেমধ্যেই। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার দক্ষতার সঙ্গে সেসব পরিস্থিতিও মোকাবিলা করেছে। শেষে সব বাধা, সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আজ গৌরবের পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। আর সেই পদ্মা সেতুর সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর পেছনে ১৬ কোটি বাঙালি। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির উজ্জ্বল সম্ভাবনা ও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেছেন আমাদের নেতা। এ সাহসী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে একজন আত্মবিশ্বাসী, প্রত্যয়ী রাষ্ট্রনেতা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের এক নতুন দাঁর উন্মোচন করেছে পদ্মা সেতু। এ সেতু পাল্টে দেবে অর্থনৈতিক কাঠামো, ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাবে কৃষি খাতে। কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অধ্যায় রচিত হবে। কৃষক পাবে তার নিজের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য।

পদ্মা সেতু কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটবে অবশ্যই। উন্নত হবে মানুষের জীবনযাত্রার মান, দেশ হবে সমৃদ্ধ। পদ্মা যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। সেতুর কাছাকাছি বিভিন্ন ব্যবসায়িক স্থাপনা গড়ে উঠবে, উন্নয়ন হবে পর্যটন শিল্পের। সেতুর আশপাশে গড়ে ওঠা নানা পর্যটন কেন্দ্র আকর্ষিত করবে দেশি- বিদেশি পর্যটকদের। এর মাধ্যমে প্রসার পাবে বাঙালি সংস্কৃতি, উন্নত হবে লোকালয়। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রেলসংযোগ ঘটাবে। মানুষ ঢাকা থেকে কম সময়ে স্বস্তির ভ্রমণ করতে পারবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শুধু যে আমরা পদ্মা সেতু পেয়েছি তা নয়, তাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফলে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজও শেষের দিকে। আশা করছি এ বছরই তা জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হবে, ইনশা আল্লাহ। এ ছাড়া কাজ এগিয়ে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী প্রকল্প, যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, পায়রা সমুদ্রবন্দর ইত্যাদির কাজ।

পদ্মা সেতু ছিল বাংলাদেশের জন্য এক মহা চ্যালেঞ্জ।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই চ্যালেঞ্জটি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন এবং জয়ী হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার সময়োপযোগী, সঠিক ও দৃঢ় নেতৃত্বের সুবাদে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। ইনশা আল্লাহ পদ্মা সেতু বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং জাতিগতভাবে আমাদের আত্মবিশ্বাস হয়েছে আকাশচুম্বী। বাংলাদেশকে আরও উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে পদ্মা সেতু আগামীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলেই আমি মনে করি।

সবশেষে বলতে চাই, পদ্মা সেতুর নাম উচ্চারণ করতে গেলে অবশ্যই জননেত্রী শেখ হাসিনার নামও উচ্চারণ করতে হবে। সেতুর নামকরণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে না হলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে এ দেশের মানুষ জানবে এ সেতু নির্মাণে তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা, দৃঢ়তা ও সাহসের কথা।

পদ্মা বহুমুখী সেতু আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা ও আমাদের মানচিত্রের এক উজ্জ্বলতম ‘আইকনিক স্থাপনা’।

 

লেখক : প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সাবেক মন্ত্রী বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর