শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে রসুল (সা.)

মো. আমিনুল ইসলাম

কোরআন ও হাদিসের আলোকে রসুল (সা.)

আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানব জাতিকে হেদায়েত দান ও সুপথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে নবী-রসুল পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে রসুল (সা.) হলেন শ্রেষ্ঠ নবী ও রসুল। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মক্কা নগরীর কোরাইশ বংশে ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়তপ্রাপ্ত হন। আর ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমিই আপনাকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে সত্যসহ পাঠিয়েছি।’ (সুরা ফাতির, আয়াত ২৪) আল্লাহ আরও বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ। এটা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহর সাক্ষাৎ ও পরকালের মুক্তির আশা করে এবং সে পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ২১) ‘হে মানুষ! তোমরা জেনে রাখো, মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি হচ্ছেন আল্লাহর রসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে অবগত।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৪০) ‘হে নবী! অবশ্যই আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৪৫) একজন খাঁটি মুসলমানের জন্য রসুল (সা.)-এর অনুসরণ-অনুকরণের প্রয়োজনীয়তা-অপরিহার্যতাকে মূলনীতিরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি রসুল (সা.) হলেন মানব জাতির জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এবং আজাব ও শাস্তির ভয় প্রদর্শনকারী। যারা তাঁর প্রতি ইমান আনবে ও তাঁকে সহায়তা করবে এবং সেই নুরের (কোরআন) অনুসরণ করবে আল্লাহর দৃষ্টিতে তারাই কল্যাণপ্রাপ্ত। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী তুমি বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমার কথা মেনে চল। তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১)

রসুল (সা.) শুধু আল্লাহর বার্তাবাহকই ছিলেন না, ছিলেন একজন যোদ্ধাও। ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে তাঁকে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছে। দিতে হয়েছে নেতৃত্ব। মাত্র ৩০৫ জন সৈন্য নিয়ে হাজারো শত্রুর মোকাবিলা করে বদর যুদ্ধে কাফেরদের পরাস্ত করেন। তিনি সেদিন আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সঙ্গে যে ওয়াদা করেছ তা পূরণ কর। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার প্রতিশ্রুত সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।’ (সুরা আনফাল, আয়াত ১২) ওহুদের যুদ্ধে তাঁর দাঁত শহীদ হয়েছিল। ঝরেছিল রক্ত। তিনি মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে মুসলিম সাম্রাজ্যের নেতা হয়েও সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। যার কোনো তুলনা হয় না। সাহাবিরা হজরত আয়শা (রা.)-এর কাছে রসুল (সা.)-এর আখলাক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাঁর আখলাক হলো পুরোপুরি আল কোরআন।’

হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকে পাঁচটি বস্তু দেওয়া হয়েছে যা এর আগে কোনো নবী বা রসুলকে দেওয়া হয়নি- ১. শত্রুদের পরাজিত করার জন্য এক মাসের দূরত্ব পর্যন্ত প্রভাব ও প্রতিপত্তি দিয়ে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে ২. গোটা পৃথিবীর জমিনের উপরিভাগ আমার উন্মতের জন্য মসজিদ ও পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে ৩. আমার জন্য গনিমতের মাল হালাল করা হয়েছে ৪. আমাকে কেয়ামতের ময়দানে শাফায়াত করার অধিকার দেওয়া হয়েছে ৫. আর আমাকে সারা দুনিয়ার মানব জাতির হেদায়েতের জন্য পাঠানো হয়েছে।’

এর চেয়ে বড় নিয়ামত আমাদের প্রিয় নবীর জন্য আর কী হতে পারে! আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে নবীর আদর্শ মেনে জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর