শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি

পার্বত্য তিন জেলার উন্নয়নে প্রধান বাধা

পার্বত্য শান্তিচুক্তি ছিল জাতীয় ঐক্য পুনর্গঠনের এক সুমহান উদ্যোগ। এ চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পাহাড়ি জেলায় সংঘাতের অবসান ঘটে। শান্তিচুক্তি সৌন্দর্যের রানি হিসেবে বিবেচিত এই জনপদে শান্তি ফিরিয়ে আনা শুধু নয়, উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করে। যে পাহাড়ে ছিল না সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সে এলাকায় এখন গড়ে উঠেছে সড়ক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক। বিদ্যুতের আলো জ্বলে প্রত্যন্ত এলাকাতেও। পাহাড়ে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়, মানসম্মত হাসপাতাল ও বিপুলসংখ্যক পর্যটন স্পট। গড়ে উঠেছে আধুনিক চাষাবাদ ব্যবস্থা। শান্তিচুক্তির সুফল পাহাড়ে বসবাসকারী পাহাড়ি ও বাঙালিদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটালেও পরিপূর্ণ সুফল তারা ভোগ করতে পারছে না কিছু সন্ত্রাসীর কারণে। তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাস, প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিয়মিত লাশ পড়ছে। রক্ত ঝরছে সাধারণ মানুষের। আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা নিত্যসঙ্গী লাখো মানুষের। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজির কারণে চার সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে গত বছরে শতাধিক মানুষ গুম-খুন হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, গত ২৪ বছরে পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের হাতে ৯ শতাধিক মানুষ খুন হয়েছেন। গুম হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার। বছরে তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজিতে লিপ্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। সরকারের তিন মেয়াদে শান্তিচুক্তির আলোকে পাহাড়ের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পার্বত্যবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের নানা প্রচেষ্টা ম্লান হয়ে যাচ্ছে চার সন্ত্রাসী গ্রুপের সন্ত্রাস ও জবরদস্তিতে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, চার সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে জেএসএস ও ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও গুম-খুনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। সংস্কারপন্থি হিসেবে এ দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর দুটি উপদলও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে জড়িত। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় উন্নয়নের গতি জোরদার করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। তাদের দেখাদেখি গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পার্বত্য শান্তিচুক্তির সুফল স্পষ্ট করতে সন্ত্রাস দমনে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর