নিত্যপণ্যের মূল্য যে কোনো সরকারের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি বলে বিবেচিত হয়। পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের শেষ দুই বছর নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় দ্বিগুণ। আদা, রসুন, পিঁয়াজ, আলুর মতো পণ্যের দাম বেড়েছিল গড়ে ৩ থেকে ৮ গুণ। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি পেটে ক্ষুধার জ্বালা শুরু হওয়ায় স্বৈরাচারের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। কোনো সংগঠন নয়, সাধারণ ছাত্রদের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, তাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়ে এক অতুলনীয় গণ অভ্যুত্থান ঘটায়। ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব এমনকি শ্রীলঙ্কার গণ অভ্যুত্থানেও এত মানুষ রাজপথে নামেনি। নিত্যপণ্যের দাম বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কমতে শুরু করে। মুনাফাখোররা বুঝতে পারে ছাত্র-জনতার রক্তের উত্তরাধিকার অন্তর্বর্তী সরকার মুনাফার লকলকে জিহ্বা সংবরণে মোটেও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে না। কিন্তু চার সপ্তাহ না কাটতেই আবারও শুরু হয়েছে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা। বেড়েছে চাল, ডিম, মুরগির দাম। চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও গরুর মাংসের দাম কমেনি। চালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে ডজনপ্রতি ১০ টাকা হারে। স্থানভেদে প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬৫ টাকায়। ডিমের পাশাপাশি কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। পিঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে অন্যান্য মাছের দামও। এ কথা ঠিক দেশের একাংশ বন্যাকবলিত। অতিবৃষ্টির শিকারও কিছু এলাকা। তারপরও আমাদের ধারণা- নিত্যপণ্যের দাম কেন বাড়ছে সে বিষয়ে সরকারকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। দাম বৃদ্ধির পেছনে অযৌক্তিক কিছু থাকলে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। বিশেষ করে চাঁদাবাজি এবং অতি মুনাফার বিষয়ে কঠোর হতে হবে তাৎক্ষণিকভাবে। দেশবাসীর আস্থা ধরে রাখতে এ ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।