শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফের একঘেয়েমিতে ঈদ বিনোদন

আলাউদ্দীন মাজিদ

ফের একঘেয়েমিতে ঈদ বিনোদন

বরাবরের মতো এবারও টিভি চ্যানেল আর সিনেমা হলে ছিল ঈদ আনন্দের আয়োজন। একসময় দর্শক বড় ও ছোট পর্দায় নতুন ছবি, নাটক, গান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ নানা বিনোদন পেতে মুখিয়ে থাকত। ঈদের অন্যতম আনন্দ অনুষঙ্গ মানেই দুই পর্দার নির্মল আয়োজন। দুঃখের বিষয়, নব্বই দশকের প্রায় প্রথম থেকেই টিভি আর সিনেমার ঈদ আয়োজন থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এর অন্যতম কারণ মূলত দুটি। একটি হলো সিনেমা ও টিভি অনুষ্ঠানের মানহীনতা আর অন্যটি হচ্ছে ছোট পর্দায় বিজ্ঞাপন প্রচারের আধিক্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদ আয়োজন নিয়ে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, “তারপরও মানসম্মত ছবি আর টিভি অনুষ্ঠান একেবারেই যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। তবে এর সংখ্যা নিতান্তই কম। যেমন দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে স্বাভাবিক সময় তো বটেই রমজানের ঈদেও দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে খ্যাতিমান টিভি ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। পাশাপাশি দুই ঈদে তার ঈদ নাটক দর্শক মন জয় করে আসছে। হানিফ সংকেতের দুটি অনুষ্ঠানই মূলত দর্শকদের জন্য সচতেনমূলক বাণী আর নির্মল আনন্দের খোরাক বেশ মুনশিয়ানার সঙ্গে ফুটে ওঠে। হানিফ সংকেতের নির্মাণ মানেই দর্শক ক্রেজ। এই ঈদেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত তার রচিত ও নির্মিত ‘অজ্ঞ-বিজ্ঞ সমাচার’ নাটকটিতে হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বর্তমান সময়ে সমাজ ও পরিবারে চলা ভাষা বিকৃতির অবক্ষয়ের দিকটি। নিঃসন্দেহে নাটকটি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।”

যেমন ছিল ঈদ নাটক

এটিএন বাংলায় প্রচারিত হানিফ সংকেতের নাটক ‘অজ্ঞ-বিজ্ঞ সমাচার’ ছিল দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে। ১২ আগস্ট ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এই নাটকটির গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত এর ভিউর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ বার। অন্য নাটকের মধ্যে ধ্রব টিভির ‘বিউটিফুল’ নাটকটির কাহিনি মূলত নির্মল হাস্য-রসাত্মক হওয়ায় এটিও দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছে। কাজল আরিফিন ওমি রচিত ও পরিচালিত এবং নিশো ও মেহজাবিন অভিনীত এই নাটকটি ইউটিউবে প্রকাশ হয় ১৩ আগস্ট। গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত এর ভিউ ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯ হাজার ৯৯১ বার। মাগরুর রশিদ বান্নার ‘আশ্রয়’ নাটকটিও দর্শক প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’, ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ছোটকাকু’, ৮ পর্বের সিরিজ ‘খালি খালি নোয়াখালী’, একুশে টেলিভিশনে নাটক ‘জামাই হাজির’, এনটিভিতে প্রচারিত ‘মুগ্ধ ব্যাকরণ’, ‘পারফেক্ট ওয়াইফ’ ও টেলিছবি ‘কেস ৩০৪০’, বাংলাভিশনে প্রচারিত ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স’ ও বৈশাখী টেলিভিশনে প্রচারিত ‘হঠাৎ সেলিব্রেটি’ নাটকগুলো দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এবার ছয় শতাধিক নাটক প্রচার হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ নাটকের বিষয় ছিল প্রেম, বন্ধুত্ব আর বিচ্ছেদ। গল্পে কোনো পরিবর্তন নেই। একই ধাঁচের গতানুগতিক গল্পের রোমান্টিক নাটক  দেখতে দেখতে দর্শক একেবারেই ত্যক্ত-বিরক্ত। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের বলেন, অতিমাত্রায় টিভি চ্যানেল হয়ে যাওয়ায় সময়ের অভাবে যত্ন নিয়ে নাটক নির্মাণ বা অভিনয়ের দক্ষতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর অতিরিক্ত নাটক নির্মাণ, নাটকের বাজেট হ্রাস, মানসম্মত গল্পের অভাবসহ একাধিক কারণে নির্মাণ আর অভিনয়ে গভীরতা কমে গেছে। নাটক হয়ে গেছে শুধুই কমেডি ও  প্রেমকেন্দ্রিক। সমাজ বা পরিবারের গল্প এখনকার নাটকে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।

ভালো-মন্দের ঈদের ছবি

ঈদে মুক্তি পেয়েছে দুটি ছবি। শাকিব-বুবলী অভিনীত জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ এবং ববি-রোশান অভিনীত কলকাতার নির্মাতা রাজা চন্দ নির্মিত ‘বেপরোয়া’ ছবিটি। মনের মতো মানুষ পাইলাম না ১৫৪টি এবং বেপরোয়া ৫৩টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশাদ জানান, মধুমিতা সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়া ‘মনের মতো মানুষ পালাম না’ ছবিটি ঈদের দিন থেকে প্রতিটি শো হাউসফুল না হলেও একেবারে হতাশ হওয়ার মতো নয়। তার কথায় শাকিব খানের ছবির আলাদা এবং বড় মাপের দর্শক রয়েছে। সেই হিসেবে ছবিটি ভালোই চলছে। স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে দুটি ছবিই। সিনেপ্লেক্সের সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহউদ্দীন আহমেদ জানান, তুলনামূলকভাবে শাকিব খানের ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছবিটির প্রতি দর্শক আগ্রহ বেশি। ‘বেপরোয়া’ মোটামুটি চলছে বলা যায়। মেসবাহউদ্দীনের কথায়- ‘এবার ডেঙ্গুজ্বর আর বৃষ্টির কারণে দর্শক কম হয়েছে।

তা সত্ত্বেও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দর্শক সিনেমা হলে আসছে এবং ছবি দেখছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীনের মতে, ঈদের ছবি হিসেবে মুক্তি পাওয়া দুটি ছবিই আরও মানসম্মত হওয়া উচিত ছিল। ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছবিটি সারা দেশে ডেঙ্গু, বৃষ্টি সত্ত্বেও ভালোই ব্যবসা করছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ছবিটি আরও ভালো চলবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কারণ এ দেশে শাকিবের ছবি দেখতে দর্শক সব সময় মুখিয়ে থাকে। অন্যদিকে ‘বেপরোয়া’ ছবিটি মোটামুটি চলছে। এটিও হয়তো আগামী সপ্তাহ থেকে সিনেমা হলে দর্শক টানতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর