মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : দিঠি আনোয়ার

বাবার অবদান পাঠ্যপুস্তকে তুলে আনা হোক

বাবার অবদান পাঠ্যপুস্তকে তুলে আনা হোক

একজন কিংবদন্তি গীতিকবি ও চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বের মহাপ্রয়াণ হলেও অনন্তকাল তিনি তাঁর সৃষ্টিকর্মে বেঁচে থাকবেন এ দেশের মানুষের হৃদয়ে। তাঁর সুযোগ্য কন্যা কণ্ঠশিল্পী দিঠি আনোয়ার বাবাকে অমর করে রাখতে কী ভাবছেন। তাঁর ভাবনা ও বলা সেই কথাই তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কর্ম নিয়ে আপনার বাবার কোনো স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেছে কি?

বাবার জীবদ্দশায় কোনো অপূর্ণতা ছিল না। ষাটের দশক থেকে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত বাবা গান লিখে গেছেন। তিনি চাইতেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁর হাতে কলম থাকবে এবং তিনি লিখে যাবেন। সেই স্বপ্ন বাবার পূরণ হয়েছে। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত বাবার হাতে কলম ছিল, তিনি গান লিখেছেন।

 

বাবার গানের বিশাল ভান্ডার সংরক্ষণে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?

বাবা ৭৯ বছরে চলে গেছেন, কিন্তু এর মাঝে ৬০টি বছরই তিনি চলচ্চিত্র ও বাংলা সংগীতকে তাঁর কর্ম দিয়ে পূর্ণতা দিয়ে গেছেন। প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি গান লিখে গেছেন তিনি। বাবার সব গান এখনো সংরক্ষণ করা যায়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাত্র ছয়-সাত শ গান সংগ্রহ করা গেছে। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এটি আসলে সম্ভব করা খুব কঠিন। এ বিষয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন বাবাসহ সব কিংবদন্তি শিল্পীর কর্ম সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্মাণাধীন এফডিসি আর্কাইভে এসব কর্ম সংরক্ষণ হবে। পারিবারিকভাবে আমরা চাই সংগীতে বাবার যে অবদান তা পাঠ্যপুস্তকে আনতে পারলে ভালো হতো। এতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাবার মহান সৃষ্টি ¯ম্পর্কে জানতে পারবে। কারণ বিবিসির জরিপে শতবর্ষের সেরা গানের মধ্যে বাবার লেখা তিনটি গান স্থান পেয়েছে।

 

আপনি বাবার গান গেয়ে প্রশংসিত হয়েছেন, আপনাকে নিয়ে তাঁর কোনো স্বপ্ন ছিল?

আমাকে নিয়ে বাবা অনেক স্বপ্ন দেখতেন। টিভিতে আমি বাবার রচিত গানগুলো গাইতাম। আমি মনে করি এতে বাবার লেগেসি ধরা রাখা সম্ভব। বাবা এতে খুব খুশি হতেন। বলতেন, তুমি তো আমার পুরনো গান গাইছ। আমি তোমার জন্য নতুন গান লিখছি। সেগুলো গাইলে তোমার নতুন পরিচয় হবে। বাবা আমার জন্য প্রচুর গান লিখে গেছেন। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য বাবা বেঁচে থাকতে সেই গানগুলো গাইতে পারলাম না। এখন সেগুলো গাইব। এসব গানসহ বাবার আগের গানগুলো বাবার নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলছি, সেখানে আপলোড করব। এতে মানুষের মাঝে বাবার সৃষ্টি ও বাবা আজীবন বেঁচে থাকবেন। এ ছাড়া আগে চ্যানেল আইয়ে ‘পালকি’ নামে একটি অনুষ্ঠানে বাবার গান করতাম। সেখানে বাবা উপস্থিত থেকে আমার গাওয়া বাবার প্রতিটি গানের পটভূমি জানাতেন। এই ‘পালকি’ অনুষ্ঠানটি আবার নতুন করে কোনো একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারের উদ্যোগ নিচ্ছি। বাবা তো আর নেই, তাই এই নতুন অনুষ্ঠানে সিনিয়র সংগীতকারদের নিয়ে আসব। তাঁরা গানগুলো নিয়ে কথা বলবেন।

 

বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে আর কী উদ্যোগ রয়েছে আপনার?

বাবার শেষ জন্মদিনে গত বছর তাঁর লেখা গান ও এসব গানের পটভূমি নিয়ে ‘অল্প কথার গল্প’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশ হয়েছিল। তাঁর আরও গান এবং এর পটভূমি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বইটি প্রকাশ করে যাব। তাছাড়া পারিবারিকভাবে বাবার গানগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করছি। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি বাবা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত একজন মানুষ। বাবার এই বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে উৎসাহিত করে। আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করা উচিত। দেশের মানুষের জন্য বাবার মতোই কিছু করার প্রবল ইচ্ছা আমার। আমি ব্যক্তি দিঠি আনোয়ার নয়, বাবার মেয়ের পরিচয়ে পরিচিত হতে গর্ববোধ করি।

 

বাবার মতো একজন কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আপনার গর্বের বিষয় কোনটি?

আমার বাবা গাজী মাজহারুল আনোয়ার, এটাই আমার অনেক অনেক গর্বের বিষয়। আমি তাঁর সন্তান হিসেবে অনেক স্থানেই সম্মানিত হই। বাবার সুনাম শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও আছে। আমি জীবনে চলার পথে বাবার কর্মক্ষেত্রে সফলতার বিষয়টি বেশি ফলো করার চেষ্টা করি। তিনি তাঁর মা-বাবাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করতেন, সেবা করতেন। একজন সন্তান হিসেবে তিনি যেমন শ্রেষ্ঠ, একজন স্বামী হিসেবেও তিনি শ্রেষ্ঠ, একজন বাবা হিসেবেও তিনি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাবা। আবার দাদা, নানা হিসেবেও তিনি শ্রেষ্ঠ। আমার জীবনের সবকিছুই বাবা জানতেন। বাবার সঙ্গেই সবকিছু  শেয়ার করে শান্তি পেতাম। বাবার শেষ স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতা পদক পাবেন তিনি। বর্তমান সরকার বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। বাবা অন্য দলের রাজনীতি করতেন জেনেও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে বাবার হাতে রাষ্ট্রীয় সম্মান তুলে দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বাবা যেমন কৃতজ্ঞ ছিলেন আমরাও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না। কারণ বাবার মৃত্যুর পরও সরকার বাবাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছে। সবাই আমার আব্বুর জন্য  দোয়া করবেন।

সর্বশেষ খবর