জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। যিনি একই সঙ্গে কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, প্রযোজক এবং একজন সাংগীতিক চিন্তাশীল মানুষ। বলা যায়, সংগীত তাঁর নিঃশ্বাসে আর শিল্প তাঁর আত্মায়। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল
আমেরিকা সফর শেষ করে কবে দেশে এসেছেন?
সেটাও তো প্রায় ২৩-২৪ দিন হলো। ১ তারিখে দেশে ফিরেছি।
সেখানে তো শো করেছেন, কেমন ছিল?
আমেরিকায় শো করে ভীষণ আনন্দিত। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার একটি গানের অনুষ্ঠান করেছি সেখানে। আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠান ছিল। শ্রোতারা কেউ উঠতে চাচ্ছিলেন না। তারপর এক ঘণ্টা সময় বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে সুন্দর আয়োজন ছিল।
তা ছাড়া, ওখানে আমার নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছি।
প্রচুর মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছেন।
দেশে এসেই তো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গান নিয়ে...
হ্যাঁ, সেটা ঠিক। এই তো, বিশ্ব সংগীত দিবসে মুক্তি পেয়েছে ‘বন্ধু হারিয়ে গেল’। সবাই গানটি শুনে ভালোই বলেছে। গানটির সুর করেছেন প্রয়াত বর্ণ চক্রবর্তী, তিনি শুধু সুরকার নন, বরং কাছের একজন শিল্পীসঙ্গী। বর্ণের অকালপ্রয়াণের পর এই গান যেন আরও গভীর অর্থ পেয়েছে। ও আমাকে বলত, আমি ওর মেন্টর। গানটা বন্ধুদের নিয়েই লেখা। এখন সেটাই গেয়ে ওকে স্মরণ করছি।’ আর আমার ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে আরেকটি নতুন গান ‘তুমিহীন’, যার কথা লিখেছেন ফারজানা রহমান এবং সুর করেছি আমি নিজেই। নতুন আরেকটি গানের মিউজিক ভিডিও তৈরি রয়েছে, সেটাও সামনে আসবে।
সংগীত প্রযোজনায়ও সক্রিয় আপনি। এর মূল লক্ষ্য কী?
ভালো গান সৃষ্টি করা, কোনোভাবেই ‘ভিউ’ বা বাণিজ্যিক চাপে না পড়ে। গান যদি শ্রুতিমধুর হয়, তাহলে সেটি কোন ঘরানার তা বড় কথা নয়। আমি সব সময় ভালো গান, ভালো শিল্পীকে গুরুত্ব দিতে চাই। তরুণদের পাশে আছি, থাকব। আমি যদি শিল্পী না হতাম, তারপরও গানের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকত, শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকত। আমি সংগীত পরিবারে বেড়ে উঠেছি। ভালো গান কী তা আমি জানি এবং বুঝি। সেভাবেই আমি গান করি এবং ভালো গান কী, মন্দ গান কী, তা বুঝি।
সুরকার হিসেবে পথচলা...
সুর করা এখন নেশার মতো হয়ে গেছে। যখনই ভালো কোনো কথা পাই, তাতে সুর বসাতে ইচ্ছে করে। কিছু গান তৈরি করে রেখেছি, দেখা যাক এ বছর কিছু গান প্রকাশ করতে পারি কি না।
কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যেমন মেলোডি গান প্রাধান্য দিয়ে আসছেন, সুরকার হিসেবেও কী একই চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করেন?
মেলোডি সুরের আবেদন চিরকালই ছিল। হয়তো সে কারণেই আমার কণ্ঠে শ্রোতারা সবসময় এ ধরনের গানই শুনতে চান। তাই যখন কোনো গানের সুর করি, তখন মেলোডিকেই প্রাধান্য দেই। অন্য শিল্পী গাইলেও সেখানে যেন আমার কাজের ছাপ থাকে, সে দিকে লক্ষ রাখি।
বর্তমানে প্লে-ব্যাকে অনুপস্থিতি নিয়ে কী বলবেন?
সিনেমার গান নিয়ন্ত্রণ করে একটা সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত শিল্পীরাই ঘুরেফিরে গাইছে। বঞ্চিত হচ্ছে বাকিরা। লুকোচুরি গল্পের পর আমার অনেক সিনেমায় গান করার কথা। কিন্তু তা আর হয়েছে কই? অনেক সময় জানতে পারি, কোনো এক সিনেমায় আমার গান করার কথা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই গানটি আর হচ্ছে না বা অন্য কেউ গাইছে। এমনও হয়েছে, গান রেকর্ড করে আসার পরও দেখি, সিনেমায় বদলে গেছে কণ্ঠ। কেন এমনটা হচ্ছে, এটার কোনো উত্তর নেই। তবে আমি বিশ্বাস করি, যোগ্যতা থাকলে বাধা দিয়ে কোনো কিছুকে আটকানো যায় না। আমি একজন যথার্থ শিল্পী হিসেবে কাজ করে যেতে চাই। আমার কণ্ঠ যদি কারও প্রয়োজন হয় সে আমাকে খুঁজে নেবে। আর আমি মনে করি, চলচ্চিত্র পরিচালকদের উচিত শিল্পী নির্বাচন করার সময় কণ্ঠ এবং চরিত্রের মিলকে প্রাধান্য দেওয়া। কারণ, একটি ভালো গান একটি সিনেমাকে দীর্ঘদিন দর্শকের মনে বাঁচিয়ে রাখে।
স্টেজ শোয়েও সীমিত উপস্থিতি...
স্টেজ শোতে কম দেখা যাওয়ার পেছনে আছে বাস্তব কিছু কারণ। অধিকাংশ আয়োজকই এমন গান চান যেগুলোতে দর্শকরা নাচতে পারেন, গলা মেলাতে পারেন। কিন্তু আমার গানের ধারা সেখানে মানানসই নয়। আমি হৈ-হুল্লোড়ের গান গাই না। তাই অনেক সময় ডাক পেলেও যাই না।