অভিনেত্রী বনশ্রী চার বছরের সন্তানকে নিয়ে সারাজীবনের জন্য দূরে কোথাও চলে যেতে চান। আক্ষেপের সুরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অচিরেই কোনো খ্রিস্টান অনাথ আশ্রমে চলে যাবেন তিনি। নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই নায়িকা এখন নিঃস্ব অবস্থায় পথে পথে বই বিক্রি ও ভিক্ষা করে ফিরছেন। তার অসহায় জীবনচিত্র তুলে ধরে গত ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনের শোবিজ বিভাগে 'চিত্রনায়িকা বনশ্রীর বাঁচার আকুতি' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। বনশ্রী বলেন এই সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। কয়েকটি ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়েছেন। কিন্তু এই সাহায্য খুবই স্বল্প। ঋণ শোধ এবং বকেয়া বাসা ভাড়া দিতে গিয়েই সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে নিজে বেঁচে থাকা এবং সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের দু-একজন মানুষ যৎসামান্য অর্থ সাহায্য করে তাকে বেঁচে থাকার স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে তারা তার ফোন কল পর্যন্ত রিসিভ করেন না। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এটাই হলো চলচ্চিত্রের মানুষের বিচিত্র চরিত্র। এ জগতে মেয়েদের রূপ-যৌবনই সব।
যতক্ষণ এই রূপ-যৌবন আছে ততক্ষণ এর লোভে রানীর আসনে বসাতেও তারা সর্বস্ব উজাড় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এসব ফুরিয়ে গেলে ফিরেও তাকায় না। বয়স কিংবা দুস্থ হলে সেই শিল্পীর অবস্থা হয় আরও করুণ। বনশ্রী বলেন, কাপড় সেলাইয়ের ওপর তার প্রশিক্ষণ রয়েছে। সবার কাছে তার অনুরোধ ছিল, সামান্য টাকা-পয়সা ভিক্ষা না দিয়ে একটি টেইলারিংয়ের দোকান খুলে দিলে সন্তান নিয়ে কোনোভাবে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবেন তিনি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেউ তা রাখেনি। এদিকে শ্বাসকষ্ট ও লিভারের জটিলতা নিয়ে এখন মৃত্যুর মুখোমুখি এই নায়িকা। থাকেন মোহাম্মদপুরের শেখের টেকের বস্তিতে। বনশ্রী জানান, খ্রিস্টানদের কোনো অনাথ আশ্রমে সন্তান নিয়ে চলে যাবেন তিনি। কারণ মুসলিমদের এমন কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নেই। তার কথায় এতে খেয়ে-পরে অন্তত ছোট্ট শিশুটি বাঁচতে পারবে। বনশ্রী নব্বই দশকে চিত্র প্রযোজক ফারুক ঠাকুরের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন। ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে 'সোহরাব-রুস্তম' চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। প্রথম ছবির সাফল্যে রাতারাতি তারকা বনে যান এই নায়িকা। কিন্তু ফারুক ঠাকুরের লোলুপদৃষ্টি এড়াতে পারেননি সুন্দরী বনশ্রী। এই প্রযোজক অন্য কারও চলচ্চিত্রে কাজ করতে দেননি তাকে। মোহাম্মদপুরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, এসি গাড়ি, অঢেল গহনা এবং বিত্ত-বৈভবের মালিক করে দেন বনশ্রীকে। ফারুককে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও স্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে রক্ষিতা করেই রাখেন তাকে, এই অভিযোগ বনশ্রীর। ফারুক ঠাকুর প্রযোজিত প্রায় দশটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এ নায়িকা। নিজে 'নিষ্ঠুর দুনিয়া' শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেন। একসময় ফারুক ঠাকুর একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে আত্দগোপন করলে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে বনশ্রীর জীবনে। একে একে সব হারিয়ে পথে নেমে আসেন তিনি। ফারুক ঠাকুরের রক্ষিতা হওয়ার কারণে অন্য কোনো নির্মাতা তাকে চলচ্চিত্রে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। চার বছর আগে মঈনুল ইসলাম মাহীন নামে এক যুবককে বিয়ে করলেও বিয়ের সাড়ে তিন বছরের মাথায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় মাহীন। চলচ্চিত্রে আসার আগে শ্যামল নামের এক হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন বনশ্রী। সেই ঘরে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পরে শ্যামল অন্যত্র বিয়ে করে এবং ফারুক ঠাকুরের হাতে তুলে দেয় বনশ্রীকে। অন্যদিকে তার কন্যা অন্ধকার জগতে হারিয়ে যায়। অতঃপর ঝলমলে তারকা বনশ্রীর ধীরে ধীরে পতন ঘটে ধরণীর নিষ্ঠুর জমিনে।