এফডিসির ক্যামেরা বিভাগ অচল হয়ে পড়েছে। ক্যামেরার অভাবে চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। মাত্র তিনটি অ্যানালগ ক্যামেরা দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ক্যামেরা বিভাগের কাজ। ফলে নির্মাতারা বাধ্য হয়ে বেশি অর্থ ব্যয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিজিটাল ক্যামেরা ভাড়া করছে। এতে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দুর্ভোগের পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছে এফডিসির চিত্রগ্রাহক সমিতির সদস্যরা।
চলচ্চিত্র চিত্রগ্রাহক সমিতির সভাপতি রেজা লতিফ জানান, এফডিসিতে বর্তমানে কর্ম উপযোগী মাত্র তিনটি ক্যামেরা (ফোর থ্রি ফোর) থাকলেও এগুলো ডিজিটাল নয়। এ ছাড়া এর লেন্সও প্রায় নষ্ট। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। তাই অ্যানালগ পদ্ধতির এ ক্যামেরা দিয়ে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নির্মাতাদের। এ ছাড়া এফডিসিতে আরও চারটি ক্যামেরা আছে। এগুলোর মধ্যে ৫০-এর দশকে কেনা টুসি ক্যামেরা দুটি দীর্ঘদিন নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। আর থ্রি সি ক্যামেরা দুটি মোটামুটি কর্ম উপযোগী হলেও অত্যন্ত পুরনো মডেলের হওয়ায় এগুলো দিয়ে শুট করা যায় না। তাই তিনটি ফোর থ্রি ফোর ক্যামেরাই এখন এফডিসির সবেধন নীলমণি। তারপরও ডিজিটাল না হওয়ায় এবং লেন্স ভালো না থাকায় এগুলো দিয়ে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রেজা লতিফ বলেন, এফডিসি কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল কমপক্ষে পাঁচ বছর আগে ডিজিটাল ক্যামেরা আনা। তাহলে নির্মাতারাও দুর্ভোগে পড়ত না এবং চিত্র গ্রাহকরাও বেকার হতো না। এফডিসির চিত্রগ্রহণ বিভাগকে সচল রাখতে এখন প্রয়োজন কমপক্ষে ১০টি ডিজিটাল ক্যামেরা। তিনি বলেন, ডিজিটাল দূরে থাক এফডিসির জন্মলগ্নে আনা সেসব ক্যামেরা দিয়েই প্রায় সাত দশক জোড়াতালি দিয়ে চিত্রায়ণের কাজ চলছে। বার বার আবেদন-নিবেদন সত্ত্বেও সরকার বা এফডিসি কর্তৃপক্ষ কখনই ক্যামেরা আনার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি। তিনি বলেন ম. হামিদ যখন এফডিসির এমডি ছিলেন তখন তিনি সিনিয়র ক্যামেরাম্যান মাহাফুজুর রহমান খানকে দিয়ে ক্যামেরা এবং লেন্সগুলো পরীক্ষা করিয়েছিলেন। পরীক্ষার রিপোর্টে এগুলো কর্ম অক্ষম বলে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও ম. হামিদ রিপোর্টটি আমলে নেননি এবং লেন্স বা ক্যামেরা আনার উদ্যোগ নেননি। রেজা লতিফ বলেন, বেশ কবছর ধরে শুনছি ডিজিটাল ক্যামেরা আসছে। কিন্তু আনার কোনো লক্ষণ দেখছি না। যাও আসবে সেগুলোও নাকি পুরনো মডেলের। অর্থাৎ সনি এফ ৫৫ ক্যামেরা। সঙ্গে লেন্সও আনা হচ্ছে না। কিন্তু এখন কাজ করতে গেলে দরকার অ্যালেক্স অথবা রেড ক্যামেরা। বিশ্বে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এই দুই ধরনের ক্যামেরাই এখন ব্যবহার হচ্ছে। পুরনো মডেলের ক্যামেরা আনার পেছনে দুর্নীতি ও এফডিসির ক্যামেরা বিভাগের ইনচার্জ পদে অযোগ্য লোক নিয়োগকে দায়ী করেন তিনি। তার কথায় এই পদে কোনো ক্যামেরাম্যানকে নিয়োগ না দেওয়ায় যুগোপযোগী ক্যামেরা সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। ফলে বারে বারে দুভোর্গে পড়তে হচ্ছে চিত্রগ্রাহকদের। তিনি বলেন, শুধু ডিজিটাল ক্যামেরা আনলেই চলবে না। এর সঙ্গে ডিজিটাল ডাবিং থিয়েটার, ডিজিটাল এডিটিং, মনিটরসহ সংশ্লিষ্ট পুরো সেট আনতে হবে। রেজা লতিফ জানান, চলচ্চিত্র চিত্রগ্রাহক সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮০ জন। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন এফডিসিতে অ্যানালগ বা বাইরে ডিজিটাল ক্যামেরায় কাজ করছে। বাকিরা বেকার এবং অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করতে গিয়ে দীর্ঘদিনের এই পেশাকেই ত্যাগ করেছে।
এফডিসির প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, ক্যামেরা ক্রয়ের জন্য সবেমাত্র ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। দুতিন মাসের মধ্যে তিনটি সনি এফ ৫৫ ক্যামেরা এসে পৌঁছবে। পুরনো মডেলের ক্যামেরা কেনা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ীই এসব ক্যামেরা আনা হচ্ছে। ২০১১ সালে একনেকের বৈঠকে এফডিসির উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের জন্য সরকার ৫৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় এবং তিন কিস্তিতে এই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই হিসেবে প্রথম কিস্তিতে অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছরে পাওয়া যায় ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যামেরা ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি টাকা। এ টাকা ক্যামেরা ক্রয়ের পরিবর্তে টেন্ডার জটিলতার অজুহাতে সরকারের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় কিস্তিতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এ টাকার মধ্যে দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার কথা থাকলেও নানা জটিলতা দেখিয়ে তাও কেনা হয়নি। বর্তমানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্থাৎ শেষ কিস্তিতে পাওয়া গেছে ১১ কোটি টাকা। এই টাকার মধ্যেই র্যাংগস কোম্পানি থেকে তিনটি সনি এফ ৫৫ ক্যামেরা আনা হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। চলচ্চিত্রকার ও চিত্রগ্রাহকরা বলছেন, পুরনো মডেলের এসব ক্যামেরা প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজেই আসবে না।