না বলা কিছু কথা বলতে চান নায়করাজ রাজ্জাক। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, 'আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নই। চিকিৎসক বলেছেন সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে। কথা বলা আর চলাফেরায় কঠোর রেসট্রিকশন আছে। সেরে উঠলেই সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাব। কিছু কথা বলব। আমার এ কথা হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণে আসতে পারে।' কী এমন কথা, যা নায়করাজকে দুঃখ বা আনন্দ দিচ্ছে; যা তিনি ঘটা করে বলতে চান। জানতে চাইলে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, 'আমার সব বলাই তো চলচ্চিত্রজগৎকে ঘিরে। এখনো স্বপ্ন দেখি আবার ঘুরে দাঁড়াবে এ শিল্প। আবার ফিরে পাব সেই সোনালি অতীত।' নায়করাজের সরল জবাব- 'এক্সট্রা হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে প্রবেশ করেছিলাম। কঠোর পরিশ্রম আর শিল্পের প্রতি মমত্ববোধ দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছিলাম। শুধু সামাজিক নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবেও আমাদের চলচ্চিত্র সমাদৃত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়িয়েছে। এ সাধনা বা প্রচেষ্টা শুধু আমার একার ছিল না। সবাই মিলে চলচ্চিত্রকে ভালোবাসার জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে অবস্থান কেন আজ ধরে রাখতে পারলাম না। আজ কেন দেশীয় চলচ্চিত্রবিমুখ দর্শক। কিছু ভালো ছেলে এসেছে। তারা চেষ্টা করছে ভালো কিছু করার জন্য। কিন্তু সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছে না। ফলে অকালেই হারিয়ে যাচ্ছে তারা।' এমন দুঃখবোধের কথা বলতে বলতে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে নায়করাজের। বলেন, 'কী বললে সান্ত্বনা পাব জানি না। আমার প্রিয় চলচ্চিত্র কি আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে না? কেউ কি নেই যিনি এমন দুঃসময় থেকে চলচ্চিত্রকে উদ্ধার করবেন?' আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নায়করাজ বলেন, 'এফডিসিতে এখন শিল্পীদের কোনো মূল্যায়ন নেই। কারা আসছে সেখানে, কী করছে জানি না। তাদের কাজ কেন গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না তাও বুঝতে পারছি না। অথচ আমাদের ছবি খুব ভালো না হলেও কমপক্ষে এক মাস সে ছবির নাম মুখে মুখে ফিরত। মাত্র পাঁচ হাজার টাকার হিরো হয়ে চলচ্চিত্রে এসে চলচ্চিত্রকে পর্বতপ্রমাণ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলাম। কেন আজ সে অবস্থার এমন করুণ পরিণতি ঘটল? ভাবতেই বুকের ভিতরটায় কষ্টগুলো হাহাকার করে ওঠে। দুই চোখ বেয়ে কষ্টের জল গড়িয়ে পড়ে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে এখন যারা যুক্ত সবাইকে বলব, তোমরা দাপটের সঙ্গে মান-ইজ্জত নিয়ে কাজ চালিয়ে যাও। শিল্পের ক্ষতি হয় এমন কোনো অবস্থার সঙ্গে আপস করো না। তাহলে সুদিন ফিরতে বাধ্য। আমরা সিনিয়ররা এবং সরকার তোমাদের সঙ্গে আছে। বর্তমান সরকার এ শিল্পের উন্নয়নে যথেষ্ট চেষ্টা করছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। চলচ্চিত্রের পুনর্জাগরণে প্রয়োজন শুধু সৎসাহস ও সদিচ্ছার।'
চলচ্চিত্রজীবনে কোনো অপ্রাপ্তি আছে কি না- জানতে চাইলে নায়করাজ বলেন, 'প্রশ্নই ওঠে না। প্রাপ্তির কোনো কমতি নেই। আশার চেয়ে বেশি পেয়েছি। চলচ্চিত্রজগৎ আজ আমাকে চলচ্চিত্রকার রাজ্জাক বানিয়েছে। অর্থ-বিত্ত-যশ- খ্যাতি সবই দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছি। আমার জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি বা পূর্ণতা আর কী হতে পারে।' নায়করাজ বলেন, 'সুস্থ হলেই আবার আমার প্রিয় চলচ্চিত্রে ফিরব। এখন অভিনয়ের চেয়ে নির্মাণেই বেশি মনোযোগ দেব। যতদিন বাঁচব চলচ্চিত্রকে বুকে আগলে রাখব। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলচ্চিত্রের কল্যাণে কাজ করে যাব।'