চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া মানেই নতুন নতুন বিতর্ক। এবার বিতর্কের বিষয় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আবদুল আজিজ এবং 'আশিকি' ছবি। আজিজকে নিয়ে এখন যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে 'রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট' ছবি মুক্তির সময়। কারণ সবাই তাকে প্রযোজক হিসেবেই জানে। কিন্তু হঠাৎ করেই ছবির টাইটেলে কলকাতার অশোক পাতির সঙ্গে নির্মাতা হিসেবে নিজের নামজুড়ে দেন তিনি। এ নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় ব্যাপক হাস্যরস তৈরি হয়। সবাই তখন বলাবলি করতে থাকে, 'যে কোনোভাবে টাকা কামিয়ে প্রযোজক হলেই ব্যস, যা খুশি করতে পারে। নির্মাতা হওয়ার মতো মেধা না থাকলেও টাকার জোরে নির্মাতা হওয়া যায়'।
'রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট'র পর চলচ্চিত্রপাড়ার মানুষের মধ্যে আবার একই হাস্যরসের উপাদান এসেছে 'আশিকি' ছবির মাধ্যমে। কারণ এ ছবিতেও আবদুল আজিজ নিজের নাম নির্মাতা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি আইনগতভাবে নির্মাতা হিসেবে নাম ব্যবহারের সব ব্যবস্থা হয়তো করেছেন, কিন্তু চলচ্চিত্রপাড়ার মানুষ বিষয়টিকে বাঁকা চোখেই দেখছেন। কিন্তু আবদুল আজিজ নিজেকে নির্মাতা হিসেবেই পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, 'অশোক পাতির সঙ্গে আমিও পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি।'
আবদুল আজিজ নিজেকে নির্মাতা বললেও কলকাতায় শুধু অশোক পাতির নামই ব্যবহার হচ্ছে। নির্মাতা হিসেবে যদি তিনি কাজ করেই থাকেন তবে শুধু বাংলাদেশে তার নাম ব্যবহার হতো না। আবদুল আজিজ যদি নির্মাতা হয়েই থাকেন, তবে কলকাতায়ও তার নাম দেখা যাচ্ছে না কেন? এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'এস কে মুভিজের টিজারে শুধু অশোক পতির নাম ব্যবহার করাটা তাদের মার্কেটিং পলিসি। নিজেদের ব্যবসায়িক সুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে সমস্যার কিছু দেখছি না।'
শুধু 'নির্মাতা বিতর্ক' নয়, 'আশিকি' ছবি নিয়ে রয়েছে আরও কিছু সমালোচনা। ২০ আগস্ট টিজারে প্রকাশ করা এই ছবির 'মেয়েদের মন বোঝা' শীর্ষক গানটিতে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাজের ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে কনার নাম। অন্যদিকে এস কে মুভিজের চ্যানেলে একই গানের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে শালমলি খোলগাডের নাম দেখানো হচ্ছে। তা ছাড়া এ গানটি ২০০৪ সালে বলিউডে মুক্তি পাওয়া 'হাম-তুম' ছবির 'লাড়কি কিউ না জানে' গানটির নকল বলে অভিযোগ উঠেছে। একই গানে দুটি টিজারে ভিন্ন শিল্পীর নাম ব্যবহার সম্পর্কে আবদুল আজিজ বলেন, 'গানটি আমি কনাকে দিয়ে গাইয়েছি। আর তারা শালমলিকে দিয়ে গাইয়েছে। এটি যার যার পছন্দের ব্যাপার।'
গানটি নিয়ে নকলের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এটি আমার জানা নেই। তবে এখন অনেক পুরনো গানের ছায়া অবলম্বনে নতুন গান তৈরি হচ্ছে।'
এদিকে চলচ্চিত্রের লোকজন বলছেন, যৌথ প্রযোজনার ছবির ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে কলকাতায় আমাদের শিল্পী কলাকুশলী না নেওয়াসহ নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য চলছে। যা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে চলতে থাকলে তা নিয়মে পরিণত হবে। সম্প্রতি যেসব ছবি যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে, এখানে বেশি বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে ২০১৩ সালে নির্মিত 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' এবং ২০১৫ সালে নির্মিত 'রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট' ছবি দুটির নাম আসে। ছবি দুটির অধিকাংশ শিল্পী ও কলাকুশলী ছিল ওপার বাংলার। কিছু কিছু অসাধু প্রযোজক দেশীয় ইন্ডাস্ট্রির কথা ভুলে নিজেদের স্বার্থে এভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যাচ্ছে। এর জন্য ২০১২ সালের যৌথ প্রযোজনার নীতিমালাকে দায়ী করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও ১৯৮৬ সালের যৌথ প্রযোজনা নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সদস্য সুচন্দা বলেন, '২০১২ সালের দুর্বল নীতিমালার কারণে এসব অনিয়ম হচ্ছে। অথচ ১৯৮৬ সালে যখন নীতিমালা তৈরি করা হয়, আমরা সব দেশের স্বার্থকে সমতা দিয়ে নীতিমালা তৈরিতে সহযোগিতা করি। সেই নীতিমালার অধীনে নির্মিত ছবিগুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নির্মাতা, কলা-কুশলীরা সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। বর্তমানের এই দুর্বল নীতিমালা সংশোধন না হলে যে কোনো পক্ষ ক্ষতির শিকার হতেই থাকবে।'