বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু বা কেউ অভিনেতাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে— এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দল। মূলত সুশান্তের পরিবার এবং তাদের আইনজীবীই এই অভিযোগ তুলেছিলেন। ফাঁসের দাগ ছাড়া আর কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি সুশান্ত সিং রাজপুতের দেহে। ধস্তাধস্তিরও কোনো প্রমাণ নেই।
শনিবার একথা জানালেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (এইমস)’র বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান সুধীর গুপ্ত। মানে, সুশান্ত মৃত্যু তদন্তে খুনের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি নাকচ করে দিলো এইমস।
সংবাদসংস্থা এএনআইকে এইমসের ফরেন্সিক প্রধান বলেন, ‘ফাঁস ছাড়া সুশান্তের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। মৃতের শরীর এবং পোশাকে লড়াই বা ধস্তাধস্তির কোনও নির্দশন নেই। ’ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কাউকে খুন করা হলে সাধারণত তিনি শেষবেলার বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। তার জেরে ধস্তাধস্তি হয়। স্বভাবতই সেই প্রমাণ থেকে যায়। কিন্তু সুশান্তের ক্ষেত্রে সেরকম কোনো নির্দশন মেলেনি।
চিকিৎসক সুধীর গুপ্ত বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি। এটা ফাঁস দেওয়ার ঘটনা এবং আত্মহত্যার জেরে মৃত্যু হয়েছে। ’
গত ১৪ জুন বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় সুশান্ত সিং রাজপুতের মরদেহ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে মুম্বাই পুলিশ জানায়, গলায় ফাঁস লাগার ফলে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অভিনেতার। পাশাপাশি এও বলা হয় যে সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন। যদিও একথা মানতে রাজি ছিলেন না অভিনেতার পরিবার এবং অনুরাগীরা। বলিউডের অনেক তারকাও সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অভিনেতার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিভিন্ন শহরের জনপদে গর্জে ওঠেন প্রতিবাদীরা। দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। সে সময় বিভিন্ন অভিযোগ এনেছিল রাজপুত পরিবারও।
এরপর মুম্বাই ও বিহার পুলিশের ঠান্ডা লড়াই এবং বিস্তর জলঘোলার পর তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। পাশাপাশি সুশান্তের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে তৈরি হয় দিল্লি এইমসের চারজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের দল। এই টিমের লিডার ছিলেন এইমসের দরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডক্টর সুধীর গুপ্তা। এর আগেও সিবিআইয়ের সঙ্গে একাধিক হাই-প্রোফাইল কেসে কাজ করেছেন তিনি।
সূত্রের খবর, এইমসের প্যানেল তাদের ছানবিন শেষ করেছে এবং ফাইল জমা দিয়েছে সিবিআই’র হাতে। অন্যদিকে শোনা গেছে, মুম্বাই পুলিশের পথে হেঁটেই আত্মহত্যায় প্ররোচনা এই সম্ভাবনায় সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সিবিআই।
মৃত্যুর পর মুম্বাইয়ের কুপার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুশান্তকে। সেখানেই হয় তার ময়নাতদন্ত। তাদের রিপোর্টের সঙ্গে এইমসের চিকিৎসকদের প্যানেল সহমত পোষণ করেছে বলে শোনা গেছে। কুপার হাসপাতাল ময়নাতদন্তের পর জানিয়েছিল যে গলায় ফাঁস লাগার ফলে দমবন্ধ হয়েই মৃত্যু হয়েছে সুশান্তের। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেও এইমসের চিকিৎসকমণ্ডলী জানিয়েছে যে সুশান্তের মৃত্যু আসলে আত্মহত্যা, খুন নয়।
সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে একাধিকবার খতিয়ে দেখা হয়েছে ক্রাইম সিন। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে সমস্ত সম্ভাবনা খুঁটিয়ে দেখেছেন সিবিআই’র তদন্তকারীরা। প্রয়াত অভিনেতার বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীসহ ৫৭ দিনের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জনকে জেরা করেছে সিবিআই। ল্যাপটপ, হার্ড ড্রাইভ, মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা এইসব জিনিসও বাজেয়াপ্ত করেছেন সিবিআই কর্তার। তবে সবকিছু খতিয়ে দেখেও সুশান্তকে কেউ খুন করেছেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুশান্তের মৃত্যু মামলায় আপাতত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা যোগ করা হচ্ছে না বলে সূত্রের খবর। একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি বলেছে, তদন্তে সবদিক খোলা আছে। অন্য কিছুর যদি প্রমাণ মেলে, তাহলে ৩০২ ধারা (খুন) যোগ করা হবে। কিন্তু তদন্তের ৪৫ দিনে সেরকম কোনও প্রমাণ মেলেনি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার