বাংলাদেশ পুলিশকে ৪০ বছর দিয়েছেন কনস্টেবল মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান! আজ বিদায় নিয়ে চলে গেলেন!
পদমর্যাদায় আমার অধীনে চাকরি করলেও শেষদিনে তাঁর কাছ থেকে শেখার ছিল অনেকটাই..
যাওয়ার প্রাক্কালে মনে হলো একটু জিজ্ঞেস করেই ফেলি, বললাম চাকরি করে সন্তুষ্টি কেমন?
বললেন অনেক ভালো স্যার। মানুষ ও পরিবারের জন্য অনেকটাই করা যায়। আমার ছেলেকেও পুলিশের চাকরিতেই উৎসাহিত করেছি। ছেলে নিজেও এখন পুলিশে চাকরি করছে স্যার।
আমাদের ব্যস্ততম পেশায় এত এত অফিসারদের মাঝে আসলে খুব খেয়াল করে কনস্টেবলদের দিকে তাকিয়ে দেখা হয়না, কথা বলার সুযোগটুকুও কম। মাঠে কাজ করা অফিসারদের সাথেই যোগাযোগটুকু থাকে। তবুও চেষ্টা থাকে কোমলতা, কঠোরতায় তাদের আপন করে নেওয়ার, সবসময় সফল হওয়াটা হয়ে উঠে না যদিও..
আজ প্রথম তিনি আমার সামনে রাখা বসার চেয়ারগুলোর একটিতে বসলেন! ভালোবাসা বড়ই সংক্রামক; তা প্রায়ই মন থেকে চোখকে ছুঁয়ে যায় এবং পানির আধার নামায়.. মোখলেস সাহেব বারবার চোখ ঠিক করছিলেন! আজ কেন যেন তাকে আমার পুলিশ মনে হচ্ছিল না, শুধু বাবা মনে হচ্ছিল! তাঁর পুরো চেহারাতেই কেমন বাবা, বাবা ছাপ!
বাবাকে বারবার জড়িয়ে ধরে যেমন সন্তান তৃপ্ত হতে পারে না, ঠিক তেমনি পিতৃহীন কোনো এক সিনিয়র অফিসার ও তৃপ্ত হতে পারছিলেন না। তাই কৌশলে বারবার জড়িয়ে ধরে সুখ খোঁজার চেষ্টাটুকু করছিলেন।
মুখ থেকে বারবার বের হয়েছে একটি লাইন "আমার জন্য দোয়া করবেন"। যে শব্দটি অফিসার জোরালোভাবে বলতে পারেননি এবং মোখলেস সাহেবও শুনতে পাননি সেই শব্দটি ছিল "বাবা"
না বলা কথা বুঝেই কিনা জানিনা, তিনি বললেন, ''স্যার আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি"! এই বলেই তিনি চলে গেলেন।
পেশাগত জীবনে চলার পথে এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসাটুকুর শক্তি অসীম, একে উপেক্ষা করার শক্তি মহান রাব্বুল আলামিন আমায় দেননি!
পিতারা বোধ করি এভাবেই প্রস্থান নেন...
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)
বিডি প্রতিদিন/হিমেল