বনানীর এফ আর ভবন যখন জ্বলছে- তখন তার চারপাশে উৎসুক (!) মানুষের ভিড় নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আচ্ছা, এই মানুষগুলো কি দূরবর্তী কোনো জায়গা থেকে এসেছে? শহরের যে কোনো বড় ভবনের পাশে যে টং এর মতো দোকানগুলো আছে- সেখানে তো এমনিতেই ভিড় লেগে থাকে। এফ আর ভবনের চারপাশে কি এমন দোকান নেই? ভবনটির সামনে দিয়ে কি পরিমাণ মানুষ হেটে যায়? কয়েক মিনিট মানুষ হাটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেলেই তো বিশাল জটলা হয়ে যায়। আশপাশের বিল্ডিং এর মানুষগুলো নেমে এলে তো কথাই নেই। এফ আর ভবনের চারপাশে এভাবেই নিশ্চয়ই মানুষের সমুদ্র হয়ে গিয়েছিল।
তারা কি সবাই উৎসুক জনতা ছিল? তাদের মধ্যে কি কোনোই অসহায়ত্ব ছিল না? কোনোই বেদনাবোধ ছিল না? নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলা দেখতে দেখতে তাদের মনের ভেতরও কি এমন আগুন জ্বলছিল না?
ধরে নিচ্ছি, তারা কেবল তামাশাই দেখেছে আগুনে পুড়তে থাকা ভবনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। যদি তাই হয়, তা হলে তো খুবই দুশ্চিন্তার ব্যাপার। খোদ রাজধানীতে বসবাস করা এতোগুলো মানুষ- আগুনে আদম সন্তানদের পুড়ে যা্ওয়ার মধ্যে ‘দেখার উপকরণ’ খুঁজে পায়? যদি তাই হয়- তা হলে তাদের এই রকম ভয়াবহ মানস কিভাবে গড়ে উঠলো? মানুষের মানবিকতা, মননশীলতা তৈরিতে, চিন্তাশীলতা তৈরিতে শিক্ষা, সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য কি তা হলে নাগরিকদের এমন মানবিকতাবোধ বিহীন করে গড়ে তুলেছে? আমাদেরি মিডিয়া কি তার দর্শক পাঠকদের মনে একটুও ভালো জিনিস, ভালো চিন্তা ডুকিয়ে দিতে পারেনি? তা হলে কি করেছে তারা? আমাদের কবিরা, সাহিত্যিকরা, সাংবাদিকরা, সংস্কৃতিসেবীরা?
রাজনীতিবিদদের কথা বাদ দেই। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা তো পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই অকার্যকর করে রেখেছে। কিন্তু নাগরিকদের মনের ভেতর আলো জ্বেলে দেয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা্ও কি ঢাকা শহরে ছিল না?
আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিড় জমানো ‘উৎসুক জনগণকে’ গালি দেয়ার আগে, সেই গালিটা আর কাউকে দেয়ার পক্ষে।
লেখক: টরন্টোর বাংলা পত্রিকা 'নতুনদেশ'- এর প্রধান সম্পাদক
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম