১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১০:১৭

তারা টকশোর এ্যাংকর নাকি অনভিজ্ঞ বক্তা ?

পীর হাবিবুর রহমান

তারা টকশোর এ্যাংকর নাকি অনভিজ্ঞ বক্তা ?

পীর হাবিবুর রহমান

এক সময় টকশো ছিল রাজনৈতিক সচেতন টিভি দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। টকশোর প্রতি মানুষের সেই আকর্ষণ এখন নেই। তবু টকশো চলছে। বরেণ্য সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় চ্যানেল আইয়ের রাত ১২টার আজকের সংবাদপত্র টকশো ছিল জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। পরদিনের সংবাদপত্রে আসা দিনের আলোচিত ঘটনার উপর বিশেষজ্ঞদের আলোচনা দর্শক টেনে রাখতো। সময় ১৮/২০মিনিট। আলোচক একজন।

এক সময়ের দেশ কাঁপানো রিপোর্টার, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, কূটনৈতিক রিপোর্টার ও বিশ্বকাপ ফুটবল প্রথম কভার করা এবং দেশের প্রথম ট্যাবলয়েড দৈনিকের জনক তিনি। অনেক সরকার শাসকের দমনপীড়নও সইতে হয়েছে তাকে।

মতিউর রহমান চৌধুরী মৃদুভাষী হলেও টকশোতে যুতসই তীক্ষ্ণ প্রশ্ন ছোট্ট করে ছুড়ে দেন আর আলোচককে কথা বলতে দেন। হস্তক্ষেপ করেন না। আরও অনেকেই উপস্থাপক হিসেবে সফল।

কিন্তু অনেক নারী উপস্থাপক আছেন যারা তাকে দূরে থাক কোন কিছুই অনুসরণ করেন না। হালে তারা কথায় ফ্যাশনে সাজগোজে পোষাকে স্মার্ট হয়ে উপস্থাপকের চেয়ারে কড়া মেকাপে বসেন।

এসব অনেক এ্যাংকরের দুর্বলতা টিভি চ্যানেলের প্রধানদের দেখা উচিত। তারা টকশোতে আলোচক অনেক আনেন, প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন এমনকি অনেকে আলোচকদের চেয়ে বেশি বক্তব্য রাখেন এবং নিজের মতকে জোর করে চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। তিনটি টিভি চ্যানেলে আমি তিনজন এ্যাংকরের ভূমিকায় চরম বিরক্ত হয়েছি এবং অনুজ হিসেবে ধমকও দিয়েছি কয়েকবার।

তারা বেশির ভাগ রাজনৈতিক টকশোর এ্যাংকর হলেও রাজনীতির অতীত বর্তমান, ইতিহাস নানান ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দূরে থাক অবহিত ও নন। তারা একের পর এক প্রশ্ন, উত্তর শোনার আগেই প্রশ্ন করে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করেই তৃপ্ত। আলোচক বা দর্শকদের সামনে যে নিজেদের অজ্ঞ মূর্খ হিসেবে তুলে ধরছেন এটা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন।

এদের অনেককেই যদি দেশের ১০টি রাজনৈতিক দলের নাম ও সে সব দলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বা ভাষা আন্দোলনের নেতা, ৬২, ৬৬ এমনকি ৬৯'র ১০ ছাত্র নেতার নাম জিজ্ঞাসা করা হয় বলতে পারবে না।বিভিন দলের ইতিহাসও নয়। তবু তারা রাজনীতিতে এতো অজ্ঞ থাকার পরেও, মেধাহীন এবং পড়াশোনা না থাকলেও এ্যাংকর কেনো বুঝি না।

তবে কি গণমাধ্যমের দেউলিয়াত্বের প্রকাশ। টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা আর রাজনৈতিক টকশোর এ্যাংকর এক নয়, এটা টিভি কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে, ভাবতে হবে। ইতিহাসের গভীরতা, ঘটনার পরম্পরার সঙ্গে মাথার যোগাযোগ থাকতে হবে।

অর্থনীতি শেয়ারবাজারসহ অনেক টকশো অনেক টিভিতে দেখি, এ্যাংকর অতিথি আলোচকদের প্রশ্নও করতে পারেন না। আলোচকদের চেয়ে নিজেরা বেশি কথা বলেন, নিজেদের মত নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করেন।যোগ্যতার আকালের যুগে প্রতিযোগিতার বাজারে ঠিকে থাকতে টিভি কতৃপক্ষকে রূপবতী বাকপটু নয়, মেধাবি দক্ষদের আনতে হবে।

চলমান দৈন্যতা গণমাধ্যমের জন্যই লজ্জা ও বেদনার। পেশাদারিত্বের বিকল্প নেই। আমি জানি, আমি পীর হাবিবুর রহমানকে না ডাকলেও তদবির করে টকশোতে যাবার সস্তা লোকের অভাব সমাজে নেই। আমি নিজেও যেতে কাঙ্গাল নই। কিন্তু গণমাধ্যমের ইজ্জত মর্যাদা অনেক বড়। গণ্ডমূর্খ একদল সুন্দরীর হাতে এ্যাংকরের দায়িত্ব দেয়া যায় না, যদি না তার যোগ্যতা দক্ষতা না থাকে।

এ্যাংকর তীর্যক প্রশ্ন করুন, উত্তর আনুন, প্রশ্নে ঘামিয়ে দিন আপত্তি নেই। কিন্তু টকশোতে নিজে ভাষণ ও উত্তর শেষ না হতেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করবেন না।এতে নিজের জানা থেকে দূরে থাকবেন। দর্শকও বুঝবে না কে এ্যাংকর কে আলোচক। বুঝলে তো সম্মানই দিবেন না।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর