গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খড়ের ঘর আজ বিলুপ্তির পথে।শীত ও গরম উভয় মৌসুমে আরামদায়ক খড়ের ছাউনির ঘর। এক সময় গ্রামের সাধারণ শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের প্রধান ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই খড়ের ঘর। কিন্তু বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালির ঐতিহ্যের এই চিহ্নটি।
খড়ের ছাউনির ঘর তৈরির জন্য গ্রামে গ্রামে বিশেষ কারিগর ছিল।কিন্তু সময়ের বির্বতনে তাদের সংখ্যা কমে এসেছে। বর্তমানে কয়েকটি ইউনিয়ন মিলেও একটা খড়ের ঘর চোখে পড়ে না। যদিও বা চোখে পড়ে সেগুলোর অবস্থা খুবই জীর্ণ ।এক সময় খড়ের ঘরের ছাউনির প্রধান উপকরণ ছিল খড়। শ্রমজীবী মানুষেরা ছন এবং ধানকাটার পর অবশিষ্ট অংশ দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করত এই ঘর। এই ঘর তৈরিতে যারা পারদর্শী তাদেরকে নীলফামারীতে স্থানীয় ভাষায় ছাফরবন বলা হয়। তাদের মজুরি ছিল ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বিশেষ কায়দায় খড়কে সাজিয়ে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে ছাউনি দেয়া হতো। ছাউনির উপরে বাঁশ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিত। সাধারণত বন্যা,ভূমিকম্প,ঝড় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এসব ঘর বছরের পর বছর পর্যন্ত টিকে থাকতো।বর্তমানে কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি নয়ান খাল বৈদ্য পাড়ায় চোখে পড়ে গ্রামীণ ঐতিহ্য খড়ের ঘর।
প্রবীন শিক্ষক আবু মুসা মাহামুদুল হক বলেন,সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষেরও জীবনধারার অনেক পরিবর্তন হওয়ায় খড়ের ঘর আজ বিলুপ্তির পথে। আজ থেকে প্রায় ২০/২৫-বছর আগেও গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দেখা যেত পরিবেশ বান্ধব ছন, বাঁশ, খড়ের ছাউনিতে তৈরি চৌচালা খড়ের ঘর।
নীলফামারী মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের সিনিয়র প্রভাষক মৃণাল কান্তি রায় বলেন,খড়ের ঘর গরমে যেমন শীতল থাকে তেমন শীত কালেও ঘর থাকে উঞ্চ। চৈত্রের তাপদাহ আর জ্যৈষ্ঠের প্রখর গরমে খড়ের ঘরই ছিল এ অঞ্চলের মানুষের শান্তির স্বর্গ। আধুনিক যুগে চিরায়িত বাঙালির খড়ের ঘর এখন শুধুই স্মৃতি। হয়ত সেদিনটি খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন খড়ের ঘরের কথা মানুষের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম রূপকথার গল্পেই এই ঘরকে স্থান দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা