বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের লক্ষ্য ভারতের

ভারত বাংলাদেশের চারটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে গভীরভাবে আগ্রহী। দেশটির ‘সেভেন সিস্টার’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের পণ্য চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যেই করা হবে এই বিনিয়োগ। অবকাঠামো সুবিধা প্রাপ্তির আলোকে ভারতীয় শিল্পপতিরা সিদ্ধান্ত নেবেন। সে বিবেচনায় আশুগঞ্জ ও মংলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ভারত। এ লক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ তার ঢাকা সফরে দেশটির শীর্ষ কয়েকজন শিল্পপতিকে নিয়ে আসছেন বলে ব্যবসায়িক ও কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা বজায় রাখার মাধ্যমে ভারতে রপ্তানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা হলেও বাংলাদেশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। ফলে বাংলাদেশি পণ্যের সর্ববৃহৎ বাজার হবে ভারতের সেভেন সিস্টার। ভারতে রপ্তানি বাণিজ্যের ইতিবাচক দিক হলো সেখানকার বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বাংলাদেশি পণ্য চায়। এ প্রসঙ্গে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যে অভিজ্ঞ এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক ও উচ্চমাত্রার। এ সম্পর্ক বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট রেখে প্রতিনিয়ত উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। এক্ষেত্রে দুই দেশই অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে সব সময়। শুনেছি, মোদির এই সফরে সঙ্গী হয়ে আসছেন ভারতের শীর্ষ কয়েকজন শিল্পপতি, যারা বিনিয়োগ করতে পারেন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে। এক্ষেত্রে ভেড়ামারা, আশুগঞ্জ, মংলা ও মিরেরসরাই ভারতের পছন্দ হলেও দুটিকে তারা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। সেক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার হলো আশুগঞ্জ ও মংলা। তবে ভারত ভূমি, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা পাওয়ার ভিত্তিতে ওই চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পর্যায়ক্রমে বিনিয়োগ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এর আগে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেছিলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের অর্থনীতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ভারতের মূল অংশের সঙ্গে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্নতার কারণে উত্তর- পূর্ব ভারতের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও উত্তর- পূর্ব ভারতে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা আছে। ৪৩ মিলিয়ন জনসংখ্যা ও ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশাল বাজার বাংলাদেশকে রপ্তানির সুযোগ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও এফবিসিসিআইর তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৫ হাজার ৫৭৮ দশমিক ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে বাংলাদেশ ৬ হাজার ৩৪ দশমিক ৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানির বিপরীতে ভারতে রপ্তানি করেছে মাত্র ৪৫৬ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ২ হাজার ৬৬৩ দশমিক ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে বাংলাদেশ ২ হাজার ৯২০ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানির বিপরীতে ভারতে রপ্তানি করেছে মাত্র ২৫৭ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জানা গেছে, দুই দেশের এমন বাণিজ্য সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগ পেতে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল দিতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে মোদির ঢাকা সফরে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সরকারও ভারতীয় বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে ইতিবাচক আগ্রহ দেখিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ভেড়ামারা, আশুগঞ্জ, মংলা ও মিরেরসরাইয়ের এই চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ভারত পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিকভাবে দুটিতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। এ দুটি হলো কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও বাগেরহাটের মংলা।